বণ্ডিকম রচনাবলী একাদশ পরিচ্ছেদ প্রভাতে উঠিয়া প্ৰফল্লি ভাবিল, “এখন কি করি ? কোথায় যাই ? এ নিবিড় জঙ্গল ত থাকিবার সােথান নয়, এখানে একা থাকিব কি প্রকারে ? যাই বা কোথায় ? বাড়ী ফিরিয়া যাইব ? আবার ডাকাইতে ধরিয়া লইয়া যাইবে। আর যেখানে যাই, এ ধনগলি লইয়া যাই কি প্রকারে ? লোক দিয়া বহিয়া লইয়া গেলে, জানাজানি হবে, চোর-ডাকাইতে কাড়িয়া লইবে । লোকই বা পাইব কোথায় ? যাহাকে পাইব, তাহাকেই বা বিশ্ববাস কি ? আমাকে মারিয়া ফেলিয়া টাকাগলি কাড়িয়া লইতে কতক্ষণ ? এ ধনের রাশির লোভ কে সম্বরণ করবে ?” প্ৰফল্লি অনেক বেলা অবধি ভাবিল। শেষে সিদ্ধান্ত এই হইল, “অদলেট যাহাঁই হোক, দারিদ্র্যদঃখ আর সহ্য করিতে পারিব না। এইখানেই থাকিব। আমার পক্ষে দর্গাপারে। আর এ জঙ্গলে তফাৎ কি ? সেখানেও আমাকে ডাকাইতে ধরিয়া লইয়া যাইতেছিল, এখানেও না হয় তাই করিবে ।” এইরােপ মনস্থির করিয়া প্ৰফল্ল গািহ-কৰ্ম্মেম প্রবত্ত হইল। ঘর দবােব পরিস্কার করিল। গোেরর সেবা করিল। শেষ রন্ধনের উদ্যোগ। রাঁধিবে কি ? হাঁড়ি, কাঠ, চাল, দাল, সকলেরই অভাব। প্রফতুল্ল একটি মোহর লইয়া হাটের সন্ধানে বাহির হইল। প্রফক্সের যে সাহস অলৌকিক, তাহার পরিচয় অনেক দেওয়া হইয়াছে। এ জঙ্গলে হাট কোথায় ? প্ৰফল্লি ভাবিল, “সন্ধান করিয়া লইব ।” জঙ্গলে পথের রেখা আছে, পাবেবই বলিয়াছি। প্রফতুল্প সেই রেখা ধরিষা চলিল । যাইতে যাইতে নিবিড় জঙগলের ভিতর একটি ব্রাহ্মণের সঙেগ সাক্ষাৎ হইল। ব্ৰাহ্মণের গায়ে নামাবলি, কপালে ফোঁটা, মাথা কামান। ব্রাহ্মণ দেখিতে গৌরবণ, অতিশয় সপরিষ, বয়স বড় বেশী নয়। ব্রাহ্মণ প্রফতুল্পকে দেখিয়া কিছ, বিস্মিত হইল। বলিল, “কোথা যাইবে, মা ?” প্র । আমি হাটে যাইব । ব্ৰাহ্মণ। এ দিকে হাটেব পথ কোথা ? প্রা। তবে কোন দিকে ? ব্ৰ। তুমি কোথা হইতে আসিতেছ ? প্রা। এই জগুগল হইতেই । 3 હરે জঙগলে তোমার বাস ? প্র । হাঁ । ব্রা। তবে তুমি হাটের পথ চেন না ? প্রা। আমি নতেন আসিয়াছি। ব্রা। এ বনে কেহ ইচ্ছাপত্ৰবািক আসে না। তুমি কেন আসিলে ? প্রা। আমাকে হাটের পথ বলিয়া দিন । ব্রা। হাট এক বেলার পথ। তুমি এক যাইতে পরিবে না। চোর-ডাকাইতের বড় ভয় । তোমার আর কে আছে ? अ । ज्याद्ध (कश् नाये । ব্ৰাহ্মণ অনেকক্ষণ ধরিয়া প্রফল্পের মািখপানে চাহিয়া দেখিল। মনে মনে বলিল, “এ বালিকা সকল সােলক্ষণযক্তো। ভাল, দেখা যাউক, ব্যাপারটা কি ?” প্রকাশ্যে বলিল, “তুমি একা হাটে যাইও না। বিপদে পড়িবে। এইখানে আমার একখানা দোকান আছে। যদি ইচ্ছা হয়, তবে সেখান হইতে চাল দােল কিনিতে পাের।” প্ৰফল্লি বলিল, “সেই হলে ভাল হয়। কিন্তু আপনাকে ত ব্ৰাহ্মণপন্ডিতের মত দেখিতেছি।” ব্ৰা। ব্রাহ্মণপন্ডিত অনেক রকমের আছে। বাছা! তুমি আমার সঙ্গে এস। এই বলিয়া ব্ৰাহ্মণ প্ৰফল্পকে সঙ্গে করিয়া আরও নিবিড়তর জগুগলের মধ্যে প্রবেশ, করিল। প্রফল্লের একটু একটু ভয় করিতে লাগিল, কিন্তু এ বনে কোথায় বা ভয় নাই ? দেখিল, সেখানে একখানি কুটনীর আছে—তালাচাবি বন্ধ, কেহ নাই। ব্রাহ্মণ তালাচাবি খলিল। প্রফােল্ল দেখিল-দোকান নয়, তবে হাঁড়ি, কলসী, চাল, দাল, নন, তেল যথেষ্ট আছে। ব্রাহ্মণ বলিল, “তুমি যাহা একা বহিয়া লইয়া যাইতে পার, লইয়া যাও।” b;‛ O bታ