পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ করিলেন । বলিলেন, “গুরুদেব ! আজি হইতে আমি আপনার নিকট এ মন্ত্র গ্রহণ করিলাম।” রমানন্দ স্বামী চন্দ্রশেখরকে আলিঙ্গন করিলেন । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সূতন পরিচয় এ দিকে যথাসময়ে ব্রহ্মচারিদত্ত পত্র নবাবের নিকট পেস হইল । নবাব জানিলেন, সেখানে দলনী আছেন। তাহাকে ও কুলুসম্কে লইয়া যাইবার জন্য . প্রতাপ রায়ের বাসায় শিবিক প্রেরিত হইল । তখন বেলা হইয়াছে। তখন সে গৃহে শৈবলিনী ভিন্ন আর কেহই ছিল না । তাহাকে দেখিয়া নবাবের অনুচরেরা বেগম বলিয়া স্থির করিল। শৈবলিনী শুনিলেন, তাহাকে কেল্লায় যাইতে হইবে । অকস্মাৎ তাহার মনে এক দুরভিসন্ধি উপস্থিত হইল। কবিগণ অাশার প্রশংসায় মুগ্ধ হন । আশ সংসারের অনেক সুখের কারণ বটে, কিন্তু আশাই দুঃখের মূল। যত পাপ কৃত হয়, সকলই লাভের আশায় । কেবল সংকার্য্য কোন আশায় কৃত হয় না । যাহারা স্বর্গের আশায় সতকাৰ্য্য করেন তাহাদের কার্য্যকে সতকাৰ্য্য বলিতে পারি না । আশায় মুগ্ধ হইয়া, শৈবলিনী আপত্তি না করিয়া, শিবিকারোহণ করিল। - খোজ৷ শৈবলিনীকে দুর্গে আনিয়া, অন্তঃপুরে নবীবের নিকটে লইয়া গেল ! নবাব দেখিলেন, এ ত দলনী নহে । আরও দেখিলেন, দলনীও এরূপ আশ্চর্য্য সুন্দরী মহে । আরও দেখিলেন যে, এরূপ লোকবিমোহিনী তাহার অন্তঃপুরে কেহই নাই । নবাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?” শৈ । আমি ব্রাহ্মণকন্ত । ন। তুমি আসিলে কেন ? শৈ। রাজভৃত্যগণ আমাকে লইয়া আসিল । ন । তোমাকে বেগম বলিয়া আনিয়াছে । বেগম আসিলেন না কেন ? শৈ । তিনি সেখানে নাই । ন । তিনি তবে কোথায় ? যখন গলুণ্ঠন ও জনসন দলনী ও কুল্সম্কে প্রতF পের বাস হইতে লইয়া যায়, শৈবলিনী তাহা দেখিতেছিল । তাহার কে, তাহ জানিত না । মনে করিয়াছিল, চাকরাণী বা নৰ্ত্তকী । কিন্তু নবাবের ভৃত্য বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী তাহাকে বলিল যে, নবাবের বেগম প্রভাপের গৃহে ছিল এবং তাহাকে সেই বেগম মনে করিয়া নবাব লইতে পাঠাইয়াছেন, তখনই শৈবলিনী বুঝিয়াছিল যে, বেগমকে ইংরেজের ধরিয়া লইয়া গিয়াছে। শৈবলিনী ভাবিতেছিল । নবাব শৈবলিনীকে নিরুত্তর দেখিয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি তাহাকে দেখিয়াছ ?” শৈ । দেখিয়াছি । ন। কোথায় দেখিলে ? শৈ । যেখানে আমরা কাল রাত্রে ছিলাম । ন। সে কোথায় ? প্রতাপরায়ের বাসায় ? শৈ । অজ্ঞে হুঁ । ন । বেগম সেখান হইতে কোথায় গিয়াছেন জান ? শৈ । দুই জন ইংরেজ র্তাহাদিগকে ধরিয়া লইয়। গিয়াছে । ন । কি বলিলে ? শৈবলিনী পূৰ্ব্বপ্রদত্ত উত্তর পুনরুক্ত করিল। নবাব মৌনী হইয়া রহিলেন । অপর দংশন করিয়া শ্মশ্র উৎপাটন করিলেন । গুরুগন থাকে ডাকিতে আদেশ করিলেন । শৈবলিনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন ইংরেজ বেগমকে ধরিয়৷ লইয়া গেল, জান ?” শৈ । না । ন । প্রতাপ তখন কোথায় ছিল ? শৈ । তাহাকেও উহার সেই সঙ্গে ধরিয়া লইয়৷ গিয়াছে । ন । তাহার বাসায় আর কোন লোক ছিল ? শৈ । এক জন চাকর ছিল, তাহাকেও ধরিয়া লইয়া গিয়াছে । নবাব আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন তাঁহাদের ধরিয়া লষ্টয়া গিয়াছে, জান ? শৈবলিনী এভক্ষণ সত্য বলিতেছিল, এখন মিথ্য। আরম্ভ করিল। বলিল, “না ।” ন। প্রতাপ কে ? তাহার বাড়ী কোথায় ? শৈবলিনী প্রতাপের সত্য পরিচয় দিল । ন। এখানে কি করিতে আসিয়াছিল ? শৈ । সরকারের চাকরী করিবেন বলিয়া । ন । তোমার কে হয় ? শৈ । আমার স্বামী । ন । তোমার নাম কি ? শৈ | রূপসী । অনায়াসে শৈবলিনী এই উত্তর দিল। পাপিষ্ঠ। এই কথা বলিবার জন্যই আসিয়াছিল ।