পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আনন্দমঠ কিছু দূরে গেলেই শ্রাবণের ধারার স্থায় গোল মহিমা গীত কর ।” তখন সেই সহস্র কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে গীত হইতে লাগিল,— “জয় জগদীশ হরে ! প্রলয়পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদং বিহিতবহিরচরিত্রমখেদম্ কেশব ধুতমীনশরীর জয় জগদীশ হরে !” সত্যানন্দ তাহাদিগকে পুনরায় আশী বাদ করিয়া বলিলেন, "হে সন্তানগণ ! তোমাদের সঙ্গে আজ আমার বিশেষ কথা আছে । টমাসনাম। এক জন বিধৰ্ম্মী চরাত্মা বহু গুর সস্তান নষ্ট করিয়াছে । আজ রাত্রে আমরা তাহাকে সসৈন্তে বধ করিব । জগদীশ্বরের আজ্ঞা—তেমরা কি বল ?" ভীষণ ইরিধবনিতে কলম বিদীর্ণ করিল। “এখনই মারিব, কোথায় তার দেপাই দিবে চল ।” “মার ! মীর । শত্রু মীর " ইত্যাতি শব্দ দুরস্থ শৈলে প্রতিধ্বনি ত ইষ্টল ! এখন সতীমদ বলিলেন, “সে জন্য আমাদিগকে একটু ধৈর্মাবলম্বন করিতে হইবে । শুক্রদের কামান আছে –কামান বাতীত তাঁহাদের সঙ্গে সৃদ্ধ সন্তবে না । বিশেষ তাহার বীর জাতি । পদচিহ্নের দুর্গ হষ্টতে ১৭ট। কামান আসিতেছে — কামান পৌঁছিলে আমর। সদ্ধমাল করিব । ঐ দেখ, & প্রভাত হইতেছে, -বেল চারিদণ্ড ইষ্টলেই –ও fক ও-—" “শুডুম্‌-গুডুম্‌ -গুম্‌ " অকস্মাং চারিদিকে বিশাল কাননে তোপের ক্স। ওয়া ও ইহঁতে লাগিল । সুতাপ ইংরেজের । জলনিবদ্ধ মানদলবং কাপ্তেন টমাস সস্তানসম্প্রদায়কে এই সাধুকাননে সিরিয়। বপ করিবার উদ্যোগ করিয়াছে । নবম পরিচ্ছেদ “শুভূম গুডুম্‌ গুম্‌ ইংরেজের কামান ডাকিল । সেই শব্দ বিশাল কানন কম্পিত করিয়া প্রতিধ্বনিত হইল “গুন্ডুম্‌ গুডুম্‌ গুম্‌ " নদীর ধাপে বাধে ফিরিয়া সেই ধ্বনি দুরস্থ আকাশপ্রান্ত হইতে প্রতিক্ষিপ্ত হইল, “শুডুম্‌ গুডুম্‌ গুম্‌ ৷” নদীপারে দূরস্থ কাননাভ্যস্তরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সেই ধ্বনি আবার ডাকিতে লাগিল, “গুডুম্‌ গুডুম্‌ গুম্‌ " সত্যানন্দ আদেশ করি লেন, “তোমরা দেখ, কিসের তোপ * কয়েক জন সস্তান ভৎক্ষণাৎ অশ্বারোহণ করিয়া দেখিতে ছুটিল ; কিন্তু তাহারা কানন হইতে বাছির হইয়। (t> তাহাদের উপর বৃষ্টি হইল, তাহার। অশ্বসহিত আহত হইয়া সকলেই প্রাণত্যাগ করিল। দূর হইতে সত্যনন্দ তাহা দেখিলেন । বলিলেন, “উচ্চ বৃক্ষে উঠ, দেখ কি ” তিনি বলিবীর অগ্ৰেই জীবানন্দ বৃক্ষে আরোহণ করিয়! প্রভাতকিরণে দেখিতেছিলেন, তিনি বৃক্ষের উপরিস্থ শাখ হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “তোপ ইংরেজের " সত্যানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “অশ্বারোহী, না পদাতিক ?" জীব । দুই-ই আছে । সত্য । কত ? জীব । আন্দাজ করিতে পারিতেছি না, এখনও বনের আড়াল হইতে বাহির হইতেছে । সত্য ! গোরা আছে ? না কেবল সিপাহী ? জীব । গোরা আছে । তখন সতানন্দ জীবনন্দকে বলিলেন, “তুমি গাছ হষ্টতে নাম " জীবানন্দ গাছ ইষ্টতে মামিলেন । সতানন্দ বলিলেন, “দশ হাজার সস্তান উপস্থিত আছে ; কি করিতে পার দেখ । তুমি আজ সেনাপতি " জীবানন্দ সশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া উল্লম্ফনে অশ্বে আরোহণ করিলেন । একবার নবীনানন্দ গোস্বামীর প্রতি দৃষ্টি করিয়া নয়নেঙ্গিতে কি বলিলেন, কেহ তাহা বুঝিতে পারিল না । নবীনানন নয়নেসিতে কি উত্তর করিলেন, তাকাও কেহ বুঝিল না, কেবল তার দুই জনেই মনে মনে বুঝিলেন যে, হয় ত এ জন্মের মত বিদায় । তপন নবীনানন্দ দক্ষিণ বাহু উত্তোলন করিয়া সকলকে বলিলেন, “ভাই ! এই সময় গা ও ‘জয় জগদীশ ইরে' " তখন সেই দশ সহস্ৰ সন্তান এককণ্ঠে নদী, কানন, আকাশ প্রতিধ্বনিত করিয়া, তোপের শব্দ ডুবাইয়া দিয়া, সহস্ৰ সহস্ৰ বাহু উত্তোলন করিয়া গারিল জয় জগদীশ হরে । ম্লেচ্ছনিবহনিধনে কলয়সি করবালম্।” এমন সময়ে সেই ইংরেজের গোলাবৃষ্টি আসিয়া কাননমধ্যে সস্তান-সম্প্রদায়ের উপর পড়িতে লাগিল : কেহ গায়িতে গায়িতে ছিন্নমস্তক, ছিন্নবাহু, ছিন্নহৃৎপিণ্ড হইয়া মাটীতে পড়িল, তথাপি কেহ গীত বন্ধ করিল ন। সকলে গায়িতে লাগিল, “জয় গেদীশ হরে ” গীত সমাপ্ত হইলে সকলেই একেবারে নিস্তব্ধ হইল । সেই নিবিড় কানন, সেই নদী-সৈকত, সেই অনস্ত বিজন একেবারে গম্ভীর নীরবতায় নিবিড় হুইল,