পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 鼎 উচাটয় কলিকাতায় দিয়া বাস করিতে বলিয়াছিলাম —খরচ পর্য্যস্ত দিতে স্বীকার করিয়াছিলাম । ভো । তার পর ? গো । তার পর সে রাজী হইল না । - ভো । ভtল, আমি তাকে একট। পরামর্শ দিতে পারি ? গো ! পার, কিন্তু আমি পরামর্শটা শুনিব । ভো । শোন ! এই বলিয়া ভোমরা “ক্ষরি । ক্ষীরি!” করিয়া এক জন চাকরাণীকে ডাকিল । তখন ক্ষীরোদ-–ওরফে ক্ষীরোদমণি, ওরফে ক্ষীরান্ধিতনয়। ওরফে শুধু ক্ষরি আসিয়া দাড়াইল, মোটাসোটা—গাটা-গোট—মল পায়ে, গোট পরাহাসি-চাহনিতে ভরা ভর। । ভোমর। বলিল, “ক্ষীরি রোহিণী পোড়ারমুখীর কাছে এখনই একবার যাইতে পারবি ?" ক্ষীরি বলিল, “পাবৃব না কেন, কি বলতে হবে ?" ভোমরা বলিল, “আমার নাম করিয়া বলিয়। আয় যে, তিনি বল্লেন, ‘তুমি মর’ ?” “এই ? —যাই ।” বলিয়া ক্ষীরোদ ওরফে ক্ষীরি মল বাজাইয়া চলিল গমনকালে ভোমরা বলিয়৷ দিল, “কি বলে, আমায় বলিয়া যাস ।" “আচ্ছ ।" বলিয়। ক্ষীরোদ গেল । অল্পকালমধ্যেই ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “বলিয়া আসিয়াছি।” ভো । সে কি বলিল ? ক্ষীরি। সে বলিল, উপায় বলিয়া দিতে বলিও । .ভো । তবে আবার যা, বলিয়। আয়- যে, বারুণীপুকুরে –সন্ধ্যাবেল—কলসী গলায় দিয়ে— বুঝেছিস ? ক্ষীরি । আচ্ছা । ক্ষরি আবার গেল, আবার আসিল । ভোমর। জিজ্ঞাসা করিল, “বারুণী-পুকুরের কথ। বলেছিস্ ?" ক্ষরি । বলিয়াছি । ভো । সে কি বলিল ? ক্ষীরি। বলিল যে, “আচ্ছা !" গোবিন্দলাল বলিলেন, “ছি ভোমরা !” ভোমরা বলিল, “ভাবিও না । সে মরিবে না । ষে তোমায় দেখিয়া মজিয়াছে, সে কি মরিতে পারে ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী %, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ দৈনিক কাৰ্য্য সমস্ত সমাপ্ত করিয়। প্রাতাহিক নিয়মানুসারে গোবিন্দলাল দিনাস্তে বারণীর তীরবর্তী পুষ্পোপ্তানে গিয়া বিচরণ করিতে লাগিলেন। গোবিন্দলালের পুষ্পোপ্তানভ্রমণ একটি প্রধান সুখ । সকল বৃক্ষের তলায় দুই চারিবার বেড়াইতেন । কিন্তু আমরা সকল বৃক্ষের কথা এখন বলিব না । বারুণীর কুলে উদ্যানমধ্যে এক উচ্চ প্রস্তরবেদিকা ছিল, বেদিক-মধ্যে একটি শ্বেতপ্রস্তরক্ষোদিত স্ত্রী-প্রতিমূৰ্ত্তি । স্ত্রী মূৰ্ত্তি অৰ্দ্ধাবৃতা, বিনতলোচনা--একটি ঘট হইতে আপন চরণদ্বরে যেন জল ঢালিতেছে,— তাহার চারিপাশ্বে বেদিকার উপরে উজ্জ্বলবর্ণরঞ্জিত মৃন্ময় আধারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সপুষ্প বৃক্ষ—জিরানিয়ম, ভাবিন, ইউফরিয়া চন্দ্রমল্লিক, গোলাপ—নীচে সেই বেদিক বেষ্টন করিয়া কামিনী, যুথিকা, মল্লিকা, গন্ধরাজ প্রভৃতি সুগন্ধি দেশী ফুলের সারি, গন্ধে গগন আমোদিত করিতেছে—তাহারই পরে বহুবিধ উজ্জ্বল, নীল, পীত, রক্ত, শ্বেত নানাবণের দেশী বিলাতী নয়নরঞ্জনকারী পাতার গাছের শ্রেণী । সেইখানে গোবিন্দলাল বসিতে ভালবাসিতেন । জ্যোৎস্নারাত্রে কখন কখন ভ্রমরকে উদ্যানভ্রমণে আনিয়া সেইখানে বসাইতেন ! ভ্রমর পাৰ্যাণময়ী স্ত্রীমূৰ্ত্তি অৰ্দ্ধারত দেখিয় তাহাঁকে কালামুখী বলিয়। গালি দিত—কখনও কখনও আপনি অঞ্চল দিয়া তাহার অঙ্গ আবৃত করিয়া দি ত—কখনও কখনও গুহ হইতে উত্তম বস্ত্র সঙ্গে আনিয়া তাহাকে পরাইয়। দিয়। ষাটত -- কখনও কখনও তাহার হস্তস্তিত ঘট লষ্টয়। টানাটানি বাধাষ্টত । সেইখানে আজি গোবিন্দলাল সন্ধ্যাকালে বসিয়া দৰ্পণানুরূপ বারুণীর জলশোভা দেখিতে লাগিলেন । দেখিতে দেখিতে দেখিলেন, সেই পুষ্করিণীর সুপরিসর প্রস্তরনিৰ্ম্মিত সোপান-পরম্পরায় রোহিণী কলসী কক্ষে অবরোহণ করিতেছে। সব না হইলে চলে, জল না হইলে চলে না । এ দুঃখের দিনেও রোহিণী জল লইতে আসিয়াছে । রোহিণী জলে নামিয়া গাত্র মার্জনা করিবার সম্ভাবনা—দৃষ্টিপথে তাহার থাকা অকৰ্ত্তব্য বলিয়া গোবিন্দলাল সে স্থান হইতে সরিয়া গেলেন । অনেকক্ষণ গোবিন্দলাল এ দিক্ ও দিক্‌ বেড়াইলেন । শেষ মনে করিলেন, এতক্ষণ রোহিণী উঠিয়া গিয়াছে । এই ভাবিয়া আবার সেই বেদিকাতলে জলনিষেকনিরত পাষাণমুনারীর পদপ্রান্তে আসিয়া