পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• لا কি প্রকারে ইহার প্রতিবন্ধকতা করিব ? কোন উপায় দেখিতে পাইলাম না । মালা গাথ বন্ধ ছইল। মাতাপিত মনে করিলেন, বিবাহ-আননো আমি ৰিহাল হইয়া মালা গাথা ত্যাগ করিয়াছি। ঈশ্বর অামাকে এক সহায় আনিম্ন দিলেন। ৰলিয়াছি, গোপাল ৰম্বর বিবাহ ছিল—তাহার পত্নীর নাম টাপা-বাপ রেখেছিল, চম্পকলত। চাপাই কেৰল এ বিৰাহে অসম্মত । চাপ একটু শক্ত মেয়ে। স্বাছাতে ঘরে সপত্নী না হয়, তাহার চেষ্টার কিছু জুটি করিল না। হীরালাল নামে চাপার এক ভাই ছিল— চাপার অপেক্ষা দেড় বৎসরের ছোট । হীরালাল মদ খায়—তাহাও অল্প মাত্রায় নহে । শুনিয়াছি, গাজাও টানে । তাহার পিতা তাহাকে লেখাপড়া শিখান নাই—কোন প্রকারে সে হস্তাক্ষরটি প্রস্তুত করিয়াছিল মাত্র, তথাপি রামসদয় ৰাবু তাহাকে কোথা কেরাণীগিরি করিয়া দিয়ছিলেন । মাতলামির দোষে সে চাকরীটি গেল । ছরনাথ বসু, তাহার দমে ভুলিয়৷ লাভের আশায় তাহাকে দোকান করিয়া দিলেন । দোকানে লাভ দুরে থাক, দেন পড়িল—দোকান উঠিয়া গেল। তার পর কোন গ্রামে বার টাকা বেতনে হীরালাল মাষ্টার হইয়া গেল। সে গ্রামে মদ পাওয়া যায় না ৰলিয়া হীরালাল পলাইয়া আসিল । তার পর সে একখানা খবরের কাগজ করিল ৷ দিন কতক তাহাতে খুব লাভ হইল, বড় পসার জাকিল, কিন্তু অশ্লীলতা দোষে পুলিস টানাটানি আরম্ভ করিল। ভয়ে হীরালাল কাগজ ফেলিয়া রূপোষ হইল। কিছু দিন পরে হীরালাল আবার হঠাৎ ভাসিয়া উঠিয়া ছোট বাবুর মোসাহেবী করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল। কিন্তু ছোট বাবুর কাছে মদের চাল নাই দেখিয়া আপনা-আপনি সরিল । আনন্তোপায় হইয়া নাটক লিখিতে আরম্ভ করিল। নাটক একখানিও বিক্রয় হইল না । তবে ছাপাখানার দেন৷ শুধিতে হয় না বলিয়া সে যাত্র রক্ষা পাইল । এক্ষণে এ ভবসংসারে আর কুল-কিনার না দেখিয়া হীরালাল চাপা দিদির আঁচল ধরিয়া বসিয়া রহিল। চাপ হীরালালকে স্বকার্য্যোদ্ধার জন্য নিয়োজিত করিল হীরালাল ভগিনীর কাছে সবিশেষ শুনিয়া জিজ্ঞাস করিল, “টাকার কথা সত্য ত? যেই কাণীকে বিবাহ করিবে, সেই টাকা পাইবে ?” চাপ। সে বিষয়ে সন্দেহ ভঞ্জন করিল। হীরালালের টাকা বড় দরকার। সে তখনই আমার বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী পিতৃভবনে আসিয়া দর্শন দিল। পিতা তখন বাড়ী ছিলেন, আমি তখন সেখানে ছিলাম না । আমি নিকটস্থ অন্ত ঘরে ছিলাম-অপরিচিত পুরুষে পিতাৱ সঙ্গে কথা কহিতেছে, কণ্ঠস্বরে জানিতে পারিয়া কাণ পাতিয়া কথাবার্তা শুনিতে লাগিলাম। হীরালালের কি কর্কশ কদৰ্য্য স্বর ! হীরালাল বলিতেছে, “সতীনের উপর কেন মেয়ে দিবে ?” পিতা দুঃখিতভাৰে বলিলেন, “কি করি । না দিলে ত ৰিয়ে হয় না—এত কাল ত হলো না ।” হীরালাল । কেন, কেন, তোমার মেয়ের বিবাহের ভাবনা কি ? পিতা হাসিলেন, বলিলেন, “আমি গরীব-ফুল বেচিয়া খাই—আমার মেয়ে কে বিবাহ কৱিৰে ? তাতে আমার কাণ মেয়ে, আবার বয়সও ঢের হয়েছে।” হীর । কেন, পাত্রের অভাব কি ? আমায় বলিলে আমি বিয়ে করি । এখন বয়স্থা মেয়ে ত লোকে চায় । আমি যখন স্তুশ ভিশ্চ শাৎ পত্রিকার এডিটার ছিলাম, তখন আমি মেয়ে বড় করিয়া বিবাহ দিবার জন্য কত আর্টিকেল লিখেছি—পড়িয়া আকাশের মেঘ ডেকে উঠেছিল । বাল্যবিবাহ ! ছি ! ছি:! মেয়ে ত বড় করিয়াই বিবাহ দিবে। এসে ! আমাকে দেশের উন্নতির একজাম্পল সেই করিতে দাও—আমিই এ মেয়ে বিয়ে করিব । আমরা তখন হীরালালের চরিত্রের কথা সবিশেষ শুনি নাই—পশ্চাৎ শুনিয়াছি । পিতা ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন । এত বড় পণ্ডিত জামাই হাতছাড়া হয় ভাবিয়া শেষে একটু দুঃখিত হইলেন । শেষ বলিলেন, “এখন কথা ধাৰ্য্য হইয়া গিয়াছে, এখন আর নড়চড় হয় না, বিশেষ এ বিবাহের কৰ্ত্তী শচীন্দ্র বাৰু। র্তাহারাই বিবাহ দিতেছেন । তাহারা যাহা করিবেন, তাহাই হইবে । র্তাহারাই গোপাল বাবুর সঙ্গে সম্বন্ধ করিয়াছেন।” হীরা। তাহাদের মতলব তুমি কি বুঝিবে ? বড়মানুষের চরিত্রের অন্ত পাওয়া ভার। তাহাদেৱ বড় বিশ্বাস করিও না । এই বলিয়া হীরালাল চুপি চুপি কি বলিল, তাছা শুনিতে পাইলাম না! পিতা বলিলেন, “সে কি ? না—আমার কাণ মেয়ে ।” হীরালাল তৎকালে ভগ্নমনোরথ হইয়া ঘরের এদিক সেদিক দেখিতে লাগিল । চারিদিক দেখিয়৷ বলিল, “তোমার ঘরে মদ নাই, বটে ছে?” পিতা