পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসমৃন্দরী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । কখন দেখি নাই। তখন আমি কান্দিতে লাগিলাম। আর ভাবিতে লাগিলাম আমার মা কোথা রহিলেন আমার পরিবারগণ বা কোথায় রহিল গ্রামের প্রতিবাসিনীগণ যাহারা আমাকে বিস্তর স্নেহ করিতেন তাহারা কোথা গেলেন আমার খেলার সঙ্গিনীগণ বা কোথা রহিল আমি বা কোথা যাইতেছি। এই ভাবিয়া আমার হৃদয় এককালে বিদীর্ণ হইয়া যাইতে লাগিল। এই প্রকার ভাবিয়া ভাবিয়া কান্দিতে লাগিলাম। আমার কান্না দেখিয়া ঐ নৌকার সকল লোক আমাকে সাত্বনা করিতে লাগিল। উহাদের সান্তন বাক্য শুনিয়া আমার বাটীর সকলের স্নেহের কথা মনে পড়িয়া আমার মনের খেদ যেন উথলিয়া উঠিল। আমার চক্ষের জল একবারে শত ধারে পড়িতে লাগিল কিছুতেই রক্ষা হয় না। কান্দিতে কান্দিতে আমার প্রাণ শ্বাসগত হইল আর র্কাদিতেও পারিন । আমি কখন নৌকাতে চড়ি নাই আমার এ জন্ত যুৱও লাগিল। তখন আমি এ সকলের আশায় নিরাশ হইয়া মনে মনে পরমেশ্বরকে ডাকিতে লাগিলাম। তখন আমার মনে কেবল একমাত্র ভয় । কিন্তু মা বলিয়াছেন ভয় হইলে পরমেশ্বরকে ডাকিও। সেই নামটী জপ করিতে লাগিলাম । আহা আমি যে তখন কি ঘোর বিপদে পড়িয়াছিলাম তাহ কেবল সেই বিপদভঞ্জনই জানেন অন্ত কেহ জানে না। এখন কখন মনে পড়ে সেই দিন । পিঞ্জরেতে পার্থী বন্দী জালে বন্দী মীন ॥ সে যাহা হউক পরমেশ্বরের নিৰ্ব্বন্ধ আমার আক্ষেপ করা নিরর্থক। বিশেষতঃ আমার পূৰ্ব্বের মনের ভাব কি প্রকার ছিল তাহাই প্রকাশ করিতেছি । আর সকল মেয়ের মনে কি প্রকার হয় জানি না। বোধ হয় এত কষ্ট তাহাদিগের না হইলেও না হইতে পারে। মনের কষ্টের কারণতো কিছুই দেখা যায় না তথাপি নিজ পরিবার ছাড়িয়া আসিয়া আমার চক্ষের জল অহরহ ঝরিত। - লোকে আমোদ করিয়া পার্থী পিঞ্জরে বন্ধ করিয়া রাখিয়া থাকে আমার যেন সেই দশা ঘটিয়াছে । আমি ঐ পিঞ্জরে এ জন্মের মত বন্দী হইলাম আমার জীবদ্দশাতে আর মুক্তি নাই। কয়েক দিবস নৌকার উপরে থাকা হইল। এক দিবস শুনিতে লাগিলাম নৌকার সকল লোক বলিতে লাগিল আজ আমরা বাট যাইব। তখন আমার মনে একবার উদয় হইল বুঝি আমাদের বাটতেই যাইব । আবার ভয়ের সহিত কত প্রকার ভাবনা হইতে লাগিল তাহার সংখ্যা নাই। এই প্রকারে যে কি ভাবনা হইতে লাগিল তাহ পরমেশ্বরই জানেন মুখে ➢ ጫግ>