পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] প্রচুর তাপালোক বর্ষণ করিত, তাহা আমরা বেশ বুঝিতে পারি। পৃথিবীর এই অবস্থাটা বহুকালস্থায়ী ছিল ; জ্যোতির্বিদগণ গণনা করিয়া দেখিয়াছেন,- চন্দ্রমণ্ডলের তরলীভূত হওয়া এবং তার পর ক্রমে কঠিনীভূত ও জীববাসোপযোগী • হইয়া শেষে আবার জীবচিত্বহীন হওয়া প্রভৃতি বহু কালসাপেক্ষ ঘটনামাত্রই পুথিবীর পূৰ্ব্বোক্ত এক অবস্থার মধ্যেই শেষ হষ্টয়া গিয়াছিল। ইহার পরেই তাপক্ষয়হেতু পুথিবীর তরল ও কঠিন আবরণের উৎপত্তিকাল । কালক্রমে পুথিবীর অধিকাংশষ্ট তরল হইয়। পড়িলে, তাপক্ষয়বশত ভূপৃষ্ঠের অংশবিশেষে কঠিন পদার্থের উৎপত্তি আরম্ভ হষ্টয়াছিল ; কিন্তু সে অংশগুলি অধিককাল কঠিনাবস্তায় থাকিতে পারিত না, ভারাধিক্যপ্রসক্ত অতুাষ্ণ তরলপদার্গে মগ্ন হইতে গিয়া তাহারা আবার তরলীভূত হইয়া পড়িত। ভূপৃষ্ঠের কঠিনাবরণের পূৰ্ব্বোক্ত প্রকারের উৎপত্তি ও লয় বহুকাল ধরিয়া চলিয়াছিল । তার পর ক্রমে পুথিবীর আভ্যন্তরীণ তাপের হ্রাস হইয়। আসিলে, সেই কঠিন পদার্থ ভূকেন্দ্রে সঞ্চিত হইয়া সমগ্র তরল পৃথিবীটার অধিকাংশই ক্রমশ কঠিলাকারে পরিণত হইয়াছিল । পৃথিবীর এই অবস্থ। অনেকট। বর্তমান যুগের শনি ও বৃহস্পতির অবস্থার অনুরূপ ছিল। এই সময়ে নানা বায়বীয় পদার্থের সম্মিলনজাত একটা গভীর বাপাবুরণে ভূপৃষ্ঠ আচ্ছন্ন থাকিত এবং সময়-সমস্তু সেই সকল বাপ তরলীভূত হইয়া উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠে প্রচুর বর্ষণ করিত এবং তাহাই আবার বাষ্পীভূত পৃথিবীর উৎপত্তি । 어 হইয়া মুকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন করিত । সহস্ৰসহস্ৰ বৎসর ধরিয়া এইপ্রকার চলিয়াছিল,

  • কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে জীবের শ্বাস

গ্রহণোপযোগী বায়ুর উৎপত্তি হয় নাই । কিপ্রকারে ভূ ত্যাকাশে বায়ু ও অঙ্গারক-বাষ্পাদির উৎপত্তি হইয়াছিল, তৎপ্রসঙ্গে পণ্ডিতসমাজে বহু আলোচনা হইয়া গিয়াছে। ডাক্তার হণ্ট ( S. Hunt ) নানা পরীক্ষাদি করিয়া যে মতবাদ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, এখন তাহাই সমীচীন বলিয়া গৃহীত হইতেছে । হণ্ট-সাহেব প্রচুর তাপপ্রয়োগে ভূমুত্তিক। বাষ্পীভূত করিয়া এবং পরে তাহারই কিয়দংশ অল্প শৈত্যসংযোগে শীতল করিয়া দেখিয়াছেন, এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিক। পুনরায় কঠিনীভূত হয় বটে, কিন্তু হাইড়োজেনযুক্ত অঙ্গার, ক্লারিন ও গন্ধক হত্যাদি প্রচুরপরিমাণে বাষ্পাবস্থায় অবশিষ্ট থাকে এবং তাহার সহিত মুক্ত নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও জলীয় বাম্পের অস্তিত্বের লক্ষণও স্পষ্ট দেখা যায়। এই সুন্দর পরীক্ষার ফল দেখিয়া বিজ্ঞানবিদগণ বলেন,—পৃথিবী কঠিনীভূত হওয়ার পর যে গভীর বাষ্পাবরণে ভূপৃষ্ঠ আচ্ছাদিত থাকিত, তন্মধ্যে কেবল পূৰ্ব্বোক্ত কয়েকটি বাম্পেরই প্রাচুর্য ছিল, এবং সেই সকল বাষ্পরাশি ক্রমাগত বৃষ্টিরূপে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠে পতিত হইয়া বাষ্পাকারে পুনঃপুন আকাশে উত্থিত হইতে থাকায়, রাসায়নিক সংযোগ-বিয়োগে ভূপৃষ্ঠে মৃত্তি কার সংস্থান হইয়াছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে আকাশও কিঞ্চিৎ নিৰ্ম্মল হইয়া পড়িয়াছিল। পুৰ্ব্বোল্লিখিত মুক্ত হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্প মৃত্তিকা