পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"לףמ বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ । সম্ভব বলিয়া বোধ করিবামাত্র যে বল আমাদের নিজের গৌরবের আনলে আমা পাওয়া যায়, তাহাতেই অনেক অসাধ্য সাধ্য হয় এবং যাহার যতটা শক্তি আছে, তাহ পূর্ণমাত্রায় কাজ করে। বৰ্ত্তমান বঙ্গসাহিত্যও হঠাৎ একদিন অভাবনীয় উন্নতির উচ্চশিখরে উঠিবে, এরূপ আশা করি। কখন উঠিবে ? যখন একমাত্র ভাব উচ্ছ,সিত হইয়া তাহার প্লাবনের দ্বারা নানাকে এক করিয়া দিবে, সকলের হৃদয়কে সকলের সম্মুখে আনিয়া দিবে, কাহায়ে কাহাকেও বুঝিতে বিলম্ব হইবে না। যখন বিভাগের মধ্যে এককে পাইব, বিচ্ছেদের মধ্যে মিলন পাইব । যখন অনুগ্রহের দ্বায়া পীড়িত হইব না, যেখানে আমাদের গৌরব আছে, সেই জায়গাটা সন্ধান করিয়া বাহির করিতে পারিব । যখন আমরা বর্তমানের বন্ধন ছেদন করিয়া তাহার বাহিরে একটা অনন্ত আশার ক্ষেত্র বিস্তৃত দেখিব। এখন ইংরাজের সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রতন্ত্র, আমাদিগকে চারিদিকে নীরন্ধু ভাবে বেষ্টন করিয়া আছে, আমরা তাহার বাহিরে কিছুই দেখিতে পাই না । পরের জিনিষ অামাদিগকে একেবারে গ্রাস করিয়াছে। যখন কোন প্রতিভাসম্পন্ন মনীষী আসিয়া এই বুেষ্টনকে ভেদ করিয়া আমাদিগকে মুক্তি দিবেন ; যখন হঠাৎ আমরা অনুভব করিব, অনুকরণই আমাদের একমাত্র গৌরব নয় ; আবিষ্কার করিব, আমাদের নিজের মধ্যে এমন এক বিশেষ শক্তি আছে, বাহ অন্ত কোন জাতির নাই ; যখন চেতন হইবে, ংরাজিগ্রন্থের অর্থপুস্তক না মুখস্থ করিয়াও আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হইতে পারে ; যখন দিগকে এক করিয়া দিবে, পরম্পরের সহিত সম্বন্ধস্বীকারে আমাদের কোন লজ্জা থাকিবে না ; তখন সেই আনন্দের দিনে, আশার দিনে, গৌরবের দিনে, মিলনের দিনে, যে সৌভাগ্যবান কবি বাংলাদেশে গান ধরিবেন, তাহার গান জগতের মধ্যে সার্থক হইবে । বঙ্গদেশ যখন নিজের অমরত্ব নিজের মধ্যে সুস্পষ্ট রূপে উপলব্ধি করিবে, নিজের সম্বন্ধে যখন তাহার কোন সংশয় – কোন সঙ্কোচ থাকিবে না, তখন নির্ভীক বঙ্গসাহিত্য সমস্ত সমালোচকের সমস্ত বাধি-বোল, সমস্ত ইস্কুলের সমস্ত মুখস্থ গৎ অবজ্ঞাভরে উপেক্ষা করিয়া নিজের অন্তরের মহান আদর্শ অবলম্বন করিয়া অপূৰ্ব্ব কারুকৌশলে আপন নবীন দেবমন্দিরকে অভ্ৰভেদী করিয়া তুলিবে, এবং মুহূৰ্ত্তের মধ্যে তাহাকে প্রাচীনের চিরন্তন মহিমা সমর্পণ করিবে। আমরা নিজের অবস্থগণ্ডীর মধ্যে বদ্ধ হইয়া, যাহা পারিয়াছি, তাহাই করিয়াছি, যাহা শিখিয়াছি, তাহাই বকিয়াছি, যাহা সম্মুখে পাইয়াছি, তাহাই বিহিতনিয়মে সাজাইয়। গেছি। অামাদের রচনা বাংলার বর্তমান ভিত্তির মধ্যে এখনো কোন নূতন গবাক্ষ কাটিয়া কোন নুতন আলোক আনে নাই, কোন নুতন আশায় দেশকে প্লাবিত করে নাই, সাহিত্যকে এমন একটি প্রাণশক্তি দেয় নাই, যে শক্তিবলে আমাদের সাহিত্য দেশের ও বিদেশের পক্ষে চিরকালের জন্য প্রাণের, সৌন্দর্য্যের ও কল্যাণের অক্ষয় ভাণ্ডার হইয়া থাকে।