পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] স্কুলের স্মৃতি। ' (5"לצ নিকট পাঠাষ্ট্রয় দেন। এইপ্রকারে বালকের প্রাতাহিক পাঠের দোষগুণ লিখিত্ব হইতে থাকে এবং বৎসরের শেষে এই পুস্তক দেখিয়া ছেলেদের পারদর্শিতার বিচার করা হয়। এই প্রকার লেখাপড়া থাকায় ছেলেরা স্কুলে ফাকি দিতে পারে না । ফরাসী স্কুলের আর একটি সুন্দর নিয়ম এই যে, টিফিনের ছুটি হইলে অথবা অপরাষ্ট্রে স্কুল বন্ধ হইলে বালকগণ দুইজন দুইজন করিয়া শ্রেণীবদ্ধভাবে ক্লাস হইতে বাহির হয়। অন্যান্য স্কুলে যেমন দেখিতে পাই, ছুটি হইলেই বালকের ভয়ানক গোলমাল করিয়া বেঞ্চ ডিঙাইয়া জানলা লাফাইয়। পরস্পরকে ধাক্কা দিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে রাস্তার দিকে ধাবমান হয়, ফরাসী স্কুলে সেরূপ হইত না এবং এখনও হয় না। ছুটির ঘণ্ট বাঞ্জিবামাত্র ছাত্রেরা দণ্ডারমান হইয়া দুইজন দুইজন করিরা নীরবে কক্ষ হইতে বাহির হইতে থাকে। প্রথমে সৰ্ব্বনিম্ন শ্রেণীর, তার পর তার উপর শ্রেণীর এবং সৰ্ব্বশেষে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রগণ বাহির হয়। স্কুল পার হইয়া পথে গিয়া ছাত্রগণ ছত্রভঙ্গ হইয়। পড়ে। ফরাসী স্কুলের এই প্রথাগুলি সকল বিদ্যালয়ে প্রবত্তিত হইলে ভাল হর । গড়ের স্কুলে একটি বাংলা বিভাগ ছিল । যদিও তাছা হইতে কখনও কাহাকেও ছাত্রবৃত্তি বা প্রাইমারী পরীক্ষা দিতে দেখি নাই, তথাপি একটি বাংলা বিভাগ ছিল । প্রত্যহ ছুটির পূৰ্ব্বে প্রায় আধঘণ্টা ধরিয়া ছাত্রের বাংলা কবিতা আবৃত্তি, করিত। বালকগণ যখন কোমল কণ্ঠে “দয়ার সাগর, সৰ্ব্বগুণাকর, যিনি অখিলের স্বামী”.অথবা “একে একে দিবারাত, করিতেছে গতায়াত, রবি-শশী আলো করে জগতে কেমন হে” বলিয়া সমস্বরে কবিতাপাঠ করিত, তখন সে কবিতপাঠ বড় মিষ্ট লাগিত । গুনিয়াছি, শিশুগণের এইপ্রকার কবিতা আবৃত্তি করিবার প্রথা হুগলী মডেল স্কুলের কোন একজন শিক্ষক প্রথমে প্রবৰ্ত্তিত করেন । ‘প্রথমে প্রবর্তিত অর্থে স্কুলে প্রথমে প্রবৰ্ত্তিত । নচেৎ আমাদের দেশীয় পাঠশালে “বন্দে মাত সুরধুনি, পুরাণে মহিমা শুনি, পতিতপাবনী পুরাতনী” আবৃত্তি হইত। কিন্তু, স্কুলনামক বিদ্যালয়ে বেঞ্চে বসিয়া ঈশ্বরের মহিমাবিষয়ে কবিতা আবৃত্তির সৃষ্টি প্রথমে হুগলী মডেল স্কুলেই হইয়াছিল। তখন বদ্ধমানবিভাগে এমন কোনও বিদ্যালয় ছিল না, যেখানে “হুগলী নৰ্ম্মাল স্কুলের ছাত্রেরা শিক্ষকতা না করিয়াছেন । আমাদের গড়ের স্কুলের পণ্ডিতমহাশয়ও হুগলী নৰ্ম্মাল স্কুলের ছাত্র ছিলেন,তাই সেই কবিতাআবৃত্তির প্রথা আমাদের স্কুলেও সংক্রামিত হইয়াছিল । কোন শ্রেণীর বালকেরা অধিক গোলমাল করিলে পণ্ডিতমহাশয় বলিরা উঠিতেন, “উত্তিষ্ঠ।” আর অমনি সকলে মুখের অৰ্দ্ধসমাপ্ত কথা অসমাপ্ত রাখিয়া নীরবে দণ্ডায়মান হইয়া উঠিত এবং যতক্ষণ পণ্ডিতমহাশয় না বলিতেন “উপবিশ", ততক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া থাকিত। আমাদের যিনি হেডু পণ্ডিত ছিলেন, তাহাকে আমরা যমের মত ভয় করিতাম। তাহার সময়ে কথা কহ দূরে থাক, কাশিতে ভয় হইত। আমাদের স্কুলে ছাত্রদের সম্মুথে ডেক্স অথবা টেবিল ছিল না, ছাত্রেরা