পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা। ] স্কুলের স্মৃতি リ ᎼbrᏜ আমাদের সময়ের আর একটা বিষয়ের অভাব আজকাল বড় অধিক বলিয়া বোধ হয়। আমার মনে হয়, আমাদের नमd ছেলেদের মধ্যে গুরুজনকে সন্ত্রম সন্মান-প্রদশন যেন এখনকার অপেক্ষ বেশী ছিল । আমরা যখন দ্বিতীয় কি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়িতাম, তখন প্রথমশ্রেণীর বা কলেজের এফ, এ, ক্লাসের ছাত্রদিগকে অতিশয় ভয় করিতাম । সহপাঠাদের সহিত খুবই বাচালতা চলিত, কিন্তু উপরশ্রেণীর ছাত্র দেখিলে লজ্জায় সঙ্কুচিত হইভাম। আমাদের নৌকায় উপরশ্রেণীর ছাত্রগণকে ঠিক জ্যেষ্ঠভ্রাতার ন্যায় দেখিতাম । কিন্তু আজকাল দেখিতে পাই, উপরশ্রেণীর ছাত্রগণকে ভয় করা দূরে থাকৃ, স্কুলের বাহিরে ছাত্রেরা নিজের শিক্ষকগণকে ও গ্রাহ করে না। এ কথা আমার কল্পিত নহে। প্রার দুইবৎসর হইল, একদিন হেয়ার স্কুলের হেড মাষ্টারের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই । তাহার নিকট আমরা হুগলী কলেজে পড়িয়াছিলাম । তিনি কথায় কথায় বলিলেন, “বাপু, আজকাল আমি ভারতবর্ষের মধ্যে একটি সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ভারতবর্ষের রাজধানী কলিকাতায় সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ গবর্ণমেণ্টের বিদ্যালয় আমার অধীনে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি হুগলীতে অথবা অদ্য কোন পল্লীগ্রামে থাকিলে ভাল হইত। এখানকার ছেলেদের কথা বলিও না ; কাহাকেও কিছু বলিতে ভয় করে, পাছে রাস্তায় ছুরি মারে। আমার ছাত্রের পথে আমার সম্মুখে বার্ডসাই খায়—লজ্জায় আমি ছাতা আড়াল দিয়া চলিয়া যাই ।” এখন যেমন স্কুল-কলেজের ছেলেদের মধ্যে ফুটবল হইয়াছে, তখন তেমূনি জিম্ন্যাষ্টিক ছিল। আমাদের લ অঞ্চলে প্রতি পাড়াতেই একটা করিয়া জিম্ন্যাষ্টিকের আডড ছিল। একটা হরাইজন্টাল বার, একজোড়া প্যারালাল বার ও একটা ট্ৰেপিজ, বার তখন সকল পাড়াতেই দেখিতে পাইতাম। এখন সে সকল অদৃপ্ত হইয়া তাহার স্থানে ফুটবল দেখা দিয়াছে। এখন কদাচিৎ দুই-একটা স্কুলে জিম্ন্তাষ্টিকের সরঞ্জাম দেখিতে পাই । ইহার মধ্যে কে ভাল, কে মন্দ, তাহা বলিতে পারি না, তবে হাত-পা-মাখ-ভাঙা উভয়ের মধ্যেই আছে। জিম্ন্যাষ্টিকের ছেলে অপেক্ষ ফুটুবলুওয়ালা ছেলেরা অনেকট বেশী সাহেবধে যা হইয়। উঠিয়াছে। এখন বঙ্গসন্তানগণ ফুটবলের প্রসাদে সাহেবন্ধবোকে গুতাটাগাতাটা দিতে কুষ্ঠিত হয় না । শ্ৰযোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়।