পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

XNు আশা তখন ঘরে আসিয়া ধীরে ধীরে সমস্ত চিঠি পড়িয়া শুনাইল । রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিলেন—“শরীরের কথা মহীনু কি লিখিয়াছে, ঐখানটা আর একবার পড় ত!” আশা পুনরায় পড়িল—“কিছুদিন হইতেই আমি তেমন ভাল বোধ করিতেছিলাম না, তাই আমি—” রাজলক্ষ্মী । থাকৃ থাকৃ, আর পড়িতে হইবে না ! ভাল বোধ হইবে কি করিয়া ! বুড়ো মা মরেও না, অথচ কেবল ব্যামে লইয়া তাহাকে জালায় ! কেন তুমি মহিন্‌কে আমার অমুখের কথা খবর দিতে গেলে ? বাড়ীতে ছিল, ঘরের কোণে বসিয়া পড়াশুনা করিতেছিল, কাহারো কোন এলাকায় ছিল না-মাঝে হইতে মার ব্যামোর কথা পাড়িয়া তাহাকে ঘরছাড়া করিয়া তোমার কি মুখ হইল ? আমি এখানে মরিয়া থাকিলে তাহাতে কাহার কি ক্ষতি হইত ? এত দুঃখেও তোমার ঘটে এইটুকু বুদ্ধি আসিল না ! বলিয়া বিছানার উপর গুইয়া পড়িলেন। বাহিরে মসমস্ শব্দ শোনা গেল। বেহার কহিল, “ডাক্তারবাবু আয়া।” ডাক্তার কাশিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। আশা তাড়াতাড়ি ঘোমটা টানিয়া থাটের অন্তরালে গিয়া দাড়াইল। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার কি হইয়াছে বলুন ত?” রাজলক্ষ্মী ক্রোধের স্বরে কহিলেন, “হইবে আর কি ? মানুষকে কি মরিতে দিবে না ? তোমার ওষুধ থাইলেই কি অমর হইরা থাকিব ?” ডাক্তার সানার স্বরে কহিল, “আমর বঙ্গদর্শন । [২য় বর্ষ, শ্রাবণ । করতে ন পারি, কষ্ট যাহাতে কমে, সে (581–” • , রাজলক্ষ্মী বলিয়া উঠিলেন, “কষ্টের ভাল চিকিৎসা ছিল, যখন বিধবার পুড়িয়া মরিত —এখন এ ত কেবল বঁাধিয়া মারা ! যাও ডাক্তারবাবু, তুমি যাও—আমাকে আর বিরক্ত করিয়ে না, আমি একলা থাকিতে চাই ।” ডাক্তার ভয়ে ভয়ে কহিল—“আপনার নাড়ীটা একবার—” রাজলক্ষ্মী অত্যন্ত বিরক্তির স্বরে কহিলেন, “আমি বলিতেছি তুমি যাও ! আমার নাড়ী বেশ আছে—এ নাড়ী শাস্ত্ৰ ছাড়িবে, এমন ভরসা নাই ।” - ডাক্তার অগত্য ঘরের বাহিরে গিয়৷ আশাকে ডাকিয়া পাঠাইল। আশাকে নবীন ডাক্তার রোগের সমস্ত বিবরণ জিজ্ঞাসা করিল। উত্তরে সমস্ত শুনিয়া গম্ভীরভাবে ঘরের মধ্যে পুনরায় প্রবেশ করিল। কহিল— “দেখুন, মহেন্দ্র আমার উপর বিশেষ করিয়া ভার দিয়া গেছে । আমাকে যদি আপনার চিকিৎসা করিতে না দেন, তবে সে মনে কষ্ট পাইবে!” মহেন্দ্র কষ্ট পাইবে, একথাটা রাজলক্ষ্মীর কাছে উপহাসের মত শুনাইল—তিনি কছিলেন, “মহিনের জন্ত বেশি ভাবিয়ো না ! কষ্ট সংসারে সকলকেই পাইতে হয় ! এ কষ্টে মহেন্দ্রকে অত্যন্ত বেশি কাতর করিবে না। তুমি এথল যাও ডাক্তার! আমাকে একটু ঘুমাইতে দাও।” 蠟 নবীন-ডাক্তার বুঝিল, রোগীকে উত্যক্ত করিলে ভাল হইবে না। ধীরে ধীরে