পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] চোখের বালি । 'సి বাহিরে আসিয়া,স্বাহী যাহা কৰ্ত্তব্য, আশাকে উপদেশ দিয়া গেল। * আশা ঘরে ঢুকিতেই রাজলক্ষ্মী কছিলেন, “যাও বাছ, তুমি একটু বিশ্রাম করগে ! সমস্তদিন রোগীর কাছে বসিয়া আছে । হারুর মাকে পাঠাইয়া দাও— পাশের ঘরে বসিয়া থাকৃ ”ি আশা রাজলক্ষ্মীকে বুঝিত। ইছা তাহার মেহের অনুরোধ নহে, ইহা তাহার আদেশ ; –পালন করা ছাড়া আর উপায় নাই । হারুর মাকে পাঠাইয়া দিয়া অন্ধকারে সে নিজের ঘরে গিয়া শীতল ভূমিশয্যায় গুইয়া পড়িল । সমস্ত দিনের উপবাসে ও কষ্টে তাহার শরীর-মন শ্রান্ত ও অবসন্ন । পাড়ার বাড়ীতে সেদিন থাকিয়! থাকিয়া বিবাহের বাদ্য বাজিতেছিল । এই সময়ে সানাইয়ে আবার সুর ধরিল। সেই রাগিণীর আঘাতে রাত্রির সমস্ত অন্ধকার যেন স্পন্দিত হইয়া অাশাকে বারংবার যেন অভিঘাত করিতে লাগিল । তাহার বিবাহরাত্রির প্রত্যেক ক্ষুদ্র ঘটনাটিও সঞ্জীব হইয়া রাত্রিয় আকাশকে স্বপ্নচ্ছবিতে পুর্ণ করিয়া তুলিল ; সেদিনকার আলোক, কোলাহল, জনতা ;—সেদিনকার মাল্যচন্দন, নববস্ত্র ও হোমধুমের গন্ধ ; নববধূর শঙ্কিত, লজ্জিত, আনন্দিত হৃদয়ের নিগুঢ়-কম্পন —সমস্তই স্কৃতির আকারে যতই তাহাকে চারিদিকে আবিষ্ট করিয়া ধরিল, ততই তাহার হৃদয়ের ব্যথা প্রাণ পাইয়া বল করিতে লাগিল। দারুণ জুর্ভিক্ষে ক্ষুধিত বালক যেমন খাদ্যের জন্ত মাতাকে আঘাত করিতে থাকে, তেমনি জাগ্রত মুখের कडि (t আপনার খান্ত চাহিয়া আশার বক্ষে বারংবার সরোদনে করাঘাত করিতে লাগিল ! অবসর আশাকে আর পড়িয়া থাকিতে দিল না। দুই হাত জোড় করিয়া দেবতার কাছে প্রার্থনা করিতে গিয়া সংসারে তাহার একমাত্র প্রত্যক্ষদেবতা মাসিমার পবিত্র স্নিগ্ধমূৰ্ত্তি আশার অশ্রুবাম্পাচ্ছন্ন হৃদয়ের মধ্যে আবিভূত হইল । পুনরায় সংসারের দুঃখঝঞ্চটে সেই তাপসীকে আহবান করিয়া আনিবে না, এতদিন ইহাই তাহার প্রতিজ্ঞ ছিল । কিন্তু আজ সে আর কোথাও কোন উপায় দেখিতে পাইল না—আজি তাহার চতুর্দিকে ঘনায়িত নিবিড় দুঃখের মধ্যে আর রন্ধ,মাত্র ছিল না। তাই আজ সে ঘরের মধ্যে আলো জালিয়া কোলের উপর একখানা খাতার চিঠির কাগজ রাখিয়া ঘনঘন চোখের জল মুছিতে মুছিতে চিঠি লিখিতে লাগিল – “শ্ৰীচরণকমলেষু— মাসিম, তুমি ছাড়া আজ আমার আর কেহ নাই। একবার আসিয়া তোমার কোলের মধ্যে এই দুঃখিনীকে টানিয়া লও—নহিলে আমি কেমন করিয়া বাচিব ? আর কি লিখিব, জানি না। তোমার চরণে আমার শতসহস্রকোটি প্রণাম । তোমার মেহের চুনি ।” (8b, ) অন্নপূর্ণ কাশী হইতে ফিরিয়া আসিয়া অতি ধীরে ধীরে রাজলক্ষ্মীর ঘরে প্রবেশকরিয়া প্রণামপূর্বক তাহার পায়ের ধূলা মাথায় তুলিয়া লইলেন। মাঝখানের