পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্য। ] কী বাদশাহজাদীদের, সঙ্কটপীড়ায় তাহার চিকিৎস৷ একান্ত আবশ্যক হইয়া পড়িত । দ্বিতীয়ত তিনি বয়োবৃদ্ধ । সম্ভবত এই উভয় কারণেই তাহাকে "বিশ্বাস কন্ধিয়া মনুযামাত্রেরই দুরভিগম্য রংমহলে প্রবেশাধিকার দেওয়া হইয়াছিল। কাফ্র স্বীয় ইতিহাসের অন্তান্ত স্থলে মেনুষীর বর্ণনা হইতে ভাবগ্রহণ করিয়াছেন মাত্র, কিন্তু নিম্নলিখিত বর্ণনায় তিনি মেনুষীর ভাষাই অবিকল অনুবাদ করিয়া দিয়াছেন। রংমহলের ভিতর প্রায় দ্বিসহস্ৰাধিক স্ত্রীলোক বাস করি ত। এতদ্ব্যতীত অপ্রাপ্তবয়স্ক যুবরাজেরাও অন্তঃপুরে থাকিতেন, আর থোজারা ত থাকিবেই। ইহার ছয় শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল । বাদশাহের বিবাহিত বেগমের প্রথমশ্রেণীভুক্ত, তাহার রক্ষিতা স্ত্রীলোকেরা দ্বিতীয়শ্রেণীর অন্তর্গত এবং যুবরাজ ও রাজপুত্রীরা তৃতীয়শ্রেণীভুক্ত। রক্ষিতার ও বেগম বটেন, কিন্তু প্রথমোক্তাদের সম্পদ সম্মান ও মর্যাদ। র্তাহাদের ছিল না । এই তিন শ্রেণাই সকলের প্রধান । তদ্ভিন্ন প্রাসাদের অন্তান্ত স্ত্রীলোকেরা- বেগম ও রাজকুমারীদের জম্বাবধানে নিযুক্ত শিক্ষমিত্রীরা—চতুর্থ শ্রেণীতে রাজসভার নৰ্ত্তকী, গায়িকা ও বাদয়িত্রীরা পঞ্চম শ্রেণীতে ও খোজারা যষ্ঠ বা সৰ্ব্বনিম্ন শ্রেণীতে পরিগণিত হইত। সম্রাটের বেগম অর্থাৎ প্রথমশ্রেণীভুক্ত রংমহল বা মোগল-বাদশাহের অন্তঃপুর । २> মহিয়ীর সংখ্যা কখন-কখন পাচ ছয়টিতে উঠিত। ইহাদেরই সহিত যথাশাস্ত্র বিবাহ হইবার নিয়ম ছিল । রাজপুতানার অনেক সন্ত্রাস্ত রাজপরিবার হইতে র্তাহীদের তনয়, ভগিনী, দৌহিত্রী বা পৌত্রীদের সহিত এইরূপ বিবাহ সম্পন্ন হইত। উচ্চ সন্ত্রাস্তবংশের প্রতি সন্মানপ্রদর্শনের জন্তই হউক অথবা অন্ত কোন গুঢ় রাজনৈতিক কারণেই হউক, ইহার একেবারেই প্রথমশ্রেণীভুক্ত হইতেন । * তা ছাড় কখন কোন রক্ষিত রমণী বা কোন নৃত্যকলাকুশলা অথবা বাদয়িত্রী বাদশাহের সুনজরে পড়িলে, র্তাহাদিগকেও প্রথমশ্রেণীতে উন্নীত করা হই ত । ইহাদের পুত্রেরাও জারজরূপে পরিগণিত না হইয়া সুলতান বলিয়াই অভিহিত হইতেন এবং সম্রাটের উত্তরাধিকারী ও হইতে পারিতেন । মেনুষী এস্থলে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন, সত্যের অনুরোধে আমরা তাহ গোপন করিতে পারিতেছি না। সে ঘটনাটি বাদশাহদের এতগুলি মহিষীর গর্ভে বহু সন্তানসন্ততি হুইবারই কথা। কিন্তু কোন মোগল-বাদশাহেরই চারিটির অধিক পুত্র হয় নাই দেখিরা তিনি সমধিক বিস্মিত হইয়াছেন । মেমুখী অনুমান করেন, মোগলঅস্তঃপুরে এমন কোন প্রথা প্রচলিত ছিল, যাহাতে চারিজনের অধিক সুলতান একসময়ে জীবিত থাকিতে পারিতেন না এবং গর্ভজাত এই ৷

  • যদিও মেনুষী বা কাত্র, উভয়ের কেহই এ কথা বলেন নাই, তথাপি আবুল ফজলের ইতিহাসে ( আইন ঈ-আকবরী) লিখিত আছে যে, আকবরের সময় হইতেই রাজপুতমহিলাদের সহিত এই বিবাহপ্রথা প্রচলিত হইয়াছিল। স্বরং সম্রাট আকবরশাহই এ প্রথার প্রথম প্ৰবৰ্ত্তক । তিনি নিজে যোধপুরের রাজ উদয়সিংহের দুহিতাকে ও তৎপুত্র জাহাগীর রাজা মানসিংহের ভগিনীকে বিবাহ করিয়াছিলেন।