পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኟማb” য়াসেই পরিস্ফুট হইয়াছে। ইহাও তাহার সরলতার নিদর্শন । ঘরের ভিতরে যে কৃত্রিম ফুল সাজাইয়া রাখা যায়, তাহার ধূলা প্লতাহ না ঝাড়িলে চলে না, কিন্তু অরণাফুলের ধূলা ঝাড়িবার জন্ত লোক রাখিতে হয় না,— সে অনাবৃত থাকে, তাহার গায়ে ধূলাও লাগে, তবু সে কেমন করিয়া সহজে আপনার সুন্দর নিৰ্ম্মলতাটুকু রক্ষা করিয়া চলে ! শকুস্তলাকে ও ধুলা লাগিয়াছিল, কিন্তু তাহ সে নিজে জানিতেও পারে নাই—সে সরলা অরণ্যের মুগীর মত, নিবরের জলধারার মত মলিনতার সংস্রলেও অনায়াসেই নিৰ্ম্মল। কালিদাস তাহার এই আশ্রম পালিতা উদ্ভিন্ননবীেবন শকুন্তলাকে সংশয়বিরহিত স্বভাবের পথে ছাড়িয়া দিয়াছেন, শেষ পয্যন্ত কোথাও তাহাকে বাঁধা দেন নাই। আবার অদ্যদিকে তাহাকে অপ্ৰগলভা, দুঃখশালা, নিয়মচারিণী, সতীধৰ্ম্মের আদশরূপিণী করিয়া ফুটাইয়। তুলিয়াছেন। একদিকে তরুলতাফল পুষ্পের ন্যায় সে আত্মবিশ্বত স্বভাবধৰ্ম্মের অনুগত, আবার অন্ত্যদিকে তাহার অন্তরতর নারী প্রকৃতি সংযত, সহিষ্ণু, একাগ্ৰতপঃপরায়ণ, কল্যাণধৰ্ম্মের শাসনে একান্ত নিয়ন্ত্রিত । কালিদাস অপরূপ কৌশলে র্তাহার নায়িকাকে লীলা ও স্থৈর্যের, স্বভাব ও নিয়মের, নদী ও সমুদ্রের ঠিক মোহানার উপর স্থাপিত করিয়া দেখাইয়াছেন । তাহার পিতা ঋষি, তাহার মাতা অপ্সরা ; ব্ৰতভঙ্গে তাছার জন্ম, তপোবনে তাহার পালন ৷ তপোবন স্থানটি এমন, যেখানে স্বভাব এবং তপস্তা, সৌন্দর্য্য এবং ংযম এক ত্ৰ মিলিত হইয়াছে । সেখানে বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, অশ্বিন। সমাজের কৃত্রিম বিধান নাই, অথচ ধৰ্ম্মের কঠোর নিয়ম বিরাজমান। গান্ধৰ্ব্ববিবাহব্যাপারটিও তেমনি ; তাহাতে স্বভাবের উদামতাওঁ আছে, অথচ বিবাহের সামাজিক বন্ধনও আছে । বন্ধন ও অবন্ধনের সঙ্গমস্থলে স্থাপিত হইয়াই শকুন্তলা-নাটকটি একটি বিশেষ অপরূপত্ব লাভ করিয়াছে। তাহার সুখ-দুঃখ-মিলন-বিচ্ছেদ সমস্তই এই উভয়ের ঘাতপ্রতিঘাতে । গেটে যে কেন তাহার সমালোচনায় শকুন্তলার মধ্যে দুই বিসদৃশের একত্র সমাবেশ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহা অভিনিবেশপূৰ্ব্বক দেখিলেষ্ট বুঝা যায় । টেম্পেষ্টে এ ভাবটি নাই । কেনই বা থাকিবে ? শকুন্তলাও সুন্দরী, মিরান্দাও সুন্দরী, তাই বলিয়। উভয়ের নাসা-চক্ষুর অবিকল সাদৃশু কে প্রত্যাশা করিতে পারে ? উভয়ের মধ্যে অবস্থার, ঘটনার, প্রকৃতির সম্পূর্ণ প্রভেদ। মিরান্দা যে নির্জনতায় শিশুকাল হইতে পালিত, শকুন্তলার সে নির্জনতা ছিল না । মিরান্দা একমাত্র পিতার সাহচর্য্যে বড় হইয়া উঠিয়াছে, সুতরাং তাহার প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হইবার আমুকুল্য পায় নাই। শকুন্তল৷ সমানবয়সী সখীদের সহিত বদ্ধিত,— তাহারা পরস্পরের উত্তাপে,অমুকরণে,ভাবের আদানপ্রদানে, হাস্তে পরিহাসে-কথোপকথনে স্বাভাবিক বিকাশ লাভ করিতেছিল । শকুন্তলা যদি অহরহ কথমুনির সঙ্গেই থাকিত, তবে তাহার উন্মেষ বাধা পাইত, তবে उर्शत সরলতা অজ্ঞতার নামান্তর হইয় তাহাকে স্ত্রী-ঋষ্যশৃঙ্গ করিয়া তুলিতে