পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] হইল । একটা প্রবল আবেগের উচ্ছ,াসের পর হৃদয়ে অবসাদ উপস্থিত হয়—ক্লান্ত হৃদয় তখন আপন অনুভূতির বিষয়কে কিছুকালের জন্য দুরে ঠেলিয়া রাধিতে চায়। সেই ভাবের ভাটার সময় তলের সমস্ত প্রচ্ছন্ন পঙ্ক বাহির হইয়া পড়ে,—যাহা মোহ অনিয়াছিল, তাহাতে বিতৃষ্ণ জন্মে । মকেন্দ্র যে কিসের জন্য নিজেকে এমন করিয়া অপমানিত করিতেছে, তাহা সে আজ বুঝিতে পারিল না । সে বলিল, “আমি সৰ্ব্বাংশেই বিনোদিনীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তবু আদ্র আমি সৰ্ব্ব প্রকার হীনতা ও লাঞ্ছনা স্বীকার করিয়া ঘৃণিত ভিক্ষুকের মত তাহার পশ্চাতে অহোরাত্র ছুটয় বেড়াইতেছি, এমনতর অদ্ভুত পাগলামি কোন সয়তান আমার মাথার মধ্যে প্রবেশ করা হয়। দিয়াছে !" বিনোদিনী মহেন্দ্রের কাছে আজ একটি স্ত্রীলোকমাত্র, আর কিছুই নহে –তাহার চারিদিকে সমস্ত পৃথিবীর সৌন্দয্য হইতে, সমস্ত কাব্য হইতে, কাহিনী হইতে যে একটি লাবণ্য জ্যোতি আকৃষ্ট হইয়াছিল, তাহ আজ মায়ামরাচিকার মত অস্তদ্ধান করিতেই একটি সামান্ত নারীমাত্র অবশিষ্ট রহিল, তাহার কোন অপূৰ্ব্বত্ব রহিল না । তখন এই ধিক্‌কৃত মোহচক্র হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া বাড়ী ফিরিয়া যাইবার জন্ত মহেন্দ্র ব্যগ্র হইল। যে শান্তি, প্রেম এবং স্নেহ তাহার ছিল, তাহাই তাহার কাছে দুর্লভতম অমৃত বলিয়া বোধ হইল। বিহারীর আশৈশব অটলনির্ভর বন্ধুত্ব তাহার কাছে মহামূল্য বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। মহেন্দ্ৰ মনে মনে কহিল, "বাছা যথার্থ গভীর চোখের বালি । \లిసిసి এবং স্থায়ী, তাহার মধ্যে বিনা চেষ্টায়, বিনা বাধায় আপনাকে সম্পূর্ণ নিমগ্ন করিয়া রাখা যায় বলিয়া তাহার গৌরব আমরা বুঝিতে পারি না—যাহা চঞ্চল ছলনামাত্র, যাহার পরিতৃপ্তিতেও লেশমাত্র মুখ নাই, তাহা আমাদিগকে পশ্চাতে উদ্ধশ্বাস ঘোড়দৌড় করাইয়া বেড়ায় বলিয়াই তাহাকেই চরম কামনার ধন বলিয়া মনে করি ।” মহেন্দ্র কহিল, “আজই বা ট্রী ফিরিয়া যাইব—বিনোদিনী যেখানেই থাকিতে চাহে, সেইখানেই তাহাকে রাখিবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়া আমি মুক্ত হইব।” “আমি মুক্ত হইব”, এই কথা দৃঢ়স্বরে উচ্চারণ করিতেই তাহার মনে একটি আনন্দের আবির্ভাব হইল—এতদিন যে অবিশ্রাম দ্বিধার ভার সে বহন করিয়। আসিতেছিল, তাহ। হালকা হুইয়া আসিল । এতদিন, এই মুহূর্তে যাহ। তাহার পরম অপ্রীতিকর ঠেকিতেছিল, পরমুহূৰ্ত্তেই তাছা সে পালন করিতে বাধ্য হইতেছিল—জোর করিয়া “না" কি “ঙ্গ।” সে বলিতে পারিতে ছিল ন!—তাহার অন্তঃকরণের মধ্যে যে আদেশ উত্থিত হইতেছিল, বরাবর জোর করিয়া তাহীর মুখচাপা দিয়া সে অন্তপথে চলিতেছিল—এখন সে যেমনি সবেগে বলিল, “আমি মুক্তিলাভ করিব”, অমনি তাহার দোলা-পীড়িত হৃদয় আশ্রয় পাইয় তাহjকে অভিনন্দন করিল। মহেন্দ্র তখনি শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিয়া মুখ ধুইয়া বিনোদিনীর সহিত দেখা করিতে গেল। গিয়া দেখিল, তাহার দ্বার বন্ধ । দ্বারে আঘাত দিয়া কহিল, “ঘুমাইতেছ কি ?”