পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రివe বিনোদিনী কহিল, “না। তুমি এখন যাও !” : g মহেন্দ্ৰ কহিল—“তোমার সঙ্গে বিশেষ কথা আছে—আমি বেশিক্ষণ থাকিব না।” বিনোদিনী কহিল—“কথা আর আমি শুনিতে পারি না--তুমি যাও, আমাকে আর বিরক্ত করিয়ো না, আমাকে একলা থাকিতে দাও !” অস্ত কোন সময় হইলে এই প্রত্যাখ্যানে মছেন্দ্রের আবেগ আরো বাড়িয়া উঠিত। কিন্তু আজ তাহার অত্যন্ত ঘৃণাবোধ হইল । সে ভাবিল, “এই সামান্ত এক স্ত্রীলোকের কাছে আমি নিজেকে এতই হীন করিয়াছি যে, আমাকে যখন তখন এমনতর অবজ্ঞাভরে দূর করিয়া দিবার অধিকার ইহার জন্মিয়াছে। সে অধিকার ইহার স্বাভাবিক অধিকার নহে । আমিই তাহা ইহাকে দিয়া ইহার গৰ্ব্ব এমন অদ্যায়রূপে বাড়াইয়া দিয়াছি।” এই লাঞ্ছনার পরে মহেন্দ্র নিজের মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করিবার চেষ্টা করিল । সে কহিল, “আমি জয়ী হইব – ইহার বন্ধন আমি ছেদন করিয়া দিয়া চলিয়া যাইব ।” আহারাস্তে মহেন্দ্র টাকা উঠাইয়া আনিবার জন্য ব্যাঙ্কে চলিয়া গেল ৷ টাকা উঠাইয়া আশার জন্ত ও মার জন্ত কিছু ভাল নুতন জিনিষ কিনিবে বলিয়া সে এলাহাবাদের দোকানে ঘুরিতে লাগিল। আবার একবার বিনোদিনীর দ্বারে আঘাত পড়িল। প্রথমে সে বিরক্ত হইয়া কোন উত্তর করিল না—তাহার পরে আবার বারবার আঘাত করিতেই বিনোদিনী জলস্তু वैक्रझर्मन { [ ২য় বর্ষ, আশ্বিন । রোষে সবলে দ্বার খুলিয়া কহিল, “কেন তুমি আমাকে বারবার বিরক্ত করিতে আসিতেছ?” কথা শেষ না হইতেই বিনোদিনী দেখিল, বিহারী দাড়াইয়া আছে । ঘরের মধ্যে মহেন্দ্র অাছে কি না, দেখিবার জষ্ঠ বিহার একবার ভিতরে চাহিয়া দেখিল । দেখিল, শয়নঘরে শুষ্কফুল এবং ছিন্নমালা ছড়ান। তাহার মন নিমেষের মধ্যেই প্রবলবেগে বিমুখ হইয়া গেল। বিহারী যখন দূরে ছিল, তখন বিনোদিনীর জীবনযাত্রাসম্বন্ধে কোন সন্দেহজনক চিত্র যে তাহার মনে উদয় হয় নাই, তাহী নহে ; কিন্তু কল্পনার লাল সে চিত্রকে ঢাকিয়াও একটি উজ্জল মোহিনীচ্ছবি দাড় করাইয়াfছল । বিহারী যখন বাগানে প্রবেশ করিতেছিল, তখন তাহার হৃৎকম্প হইতেছিল— পাছে কল্পনাপ্রতিমায় অকস্মাৎ আঘাত লাগে, এইজন্ত তাহার চিত্ত সস্কুচিত হইতেছিল । বিহারা বিনোদিনীর শয়নগৃহের দ্বারের সন্মুখে দাড়াইবামাত্র সেই আঘাতটাই লাগিল । দূরে থাকিয়। বিহারা একসময় মনে করিয়াছিল, সে আপনার প্রেমাভিষেকে বিনোদিনীর জীবনের সমস্ত পঙ্কিলতা অনায়াসে ধৌত করিয়া লইতে পারিবে । কাছে আসিয়া দেখিল, তাহা সহজ নহে— মনের মধ্যে করুণার বেদন আসিল কই ? হঠাৎ ঘৃণার তরঙ্গ উঠিয়া তাহাকে অভিভূত করিয়া দিল । বিনোদিনীকে বিহারী অত্যন্ত মলিন দেখিল । একমুহূর্তেই বিহারী ফিরিয়া দাঁড়াইয়া "মহেন্দ্র” “মহেন্দ্র” করিয়া ডাকিল ।