পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

یاف8t বঙ্গদর্শন । [২য় বর্ষ, পৌষ । অমৃতলেখনীর সহিত সাক্ষাৎ পরিচয় তাহাদের ভাগ্যে ঘটে নাই। কিন্তু আপনি জ্ঞানী, আপনি পণ্ডিত, আপনি কলাবিৎ, আপনি সমালোচক, আপনি লমজুদার, আপনি সস্তরণ দিয়া সংস্কৃতসাহিত্যসমুদ্রের পার দেখিয়াছেন, আপনার সপ্তকাণ্ড রামায়ণ আদ্যন্ত কণ্ঠস্থ রহিয়াছে, আপনার যদি বিশ্বাস থাকে যে, ঐ পল্লীবাসিনী মুখ বৃদ্ধার অপেক্ষ আপনি নিঃসংশয়ে রামরসায়নে অধিকতর রসগ্রাহী হইয়াছেন, তাহা হইলে আপনাকে ভ্রান্ত বলিয়া নির্দেশ করিব । বস্তুতই আমার বিশ্বাস, মহাকাব্যের লক্ষণ এই ষে, উহার আগাগোড়া অক্ষরেঅক্ষরে পড়িবার প্রয়োজন নাই। মূল হোমার পৃথিবীতে কয়জন লোক পড়িয়াছে ? পণ্ডিতসমাজের মধ্যে কয়জন লোক হোমারের তর্জমা পর্য্যন্ত পাঠ করিয়াছেন ? অধিকাংশের পক্ষে কেবল হোমারের গল্প শুনা আছে মাত্র। অথচ টু ফু-নগরের প্রাকারসম্মুখে সমুদ্রবেলা পূর্ণ করিয়া আমরা আগামেম্ননপরিচালিত গ্ৰীক অক্ষৌহিণীর সন্নিবেশ বর্তমান মুহূর্তে চক্ষের সম্মুখে স্পষ্ট তুলিকায় চিত্রিত দেখিতেছি । সেই বিস্তীর্ণ স্তব্ধ সেনাকুলিত রণাঙ্গনের উপর দিয়া একিলাস, আজাকৃস ও দায়োমীদের বিশালবক্ষা পরিণত্বকদ্ধর শালপ্রাংগু জীবন্ত মূৰ্ত্তি বিচরণ করিতেছে ; বৎসরের পর বৎসর অতিক্রান্ত হইতেছে, কিন্তু টয়নগরের দুর্ভেদ্য প্রাকার ভগ্ন হইল না ; গ্রীকৃ বীরগণের শিবিরমধ্যে মানবহৃদয়ের সনাতন ঈর্ষ্যাবিদ্বেষ ধূমায়মান হইতে লাগিল। সেই ধূম হইতে অগ্নি জলিয়া উঠিল, গ্ৰীকৃ বীরগণ ক্ষণেকের জন্ত উদ্বেশুভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া"পরম্পর আত্মকলহে প্রবৃত্ত হইলেন ; তার পর-অঙ্কের যবনিক তুলিবামাত্র অকস্মাৎ পাত্রোক্লসের চিতাধুম প্রশমিত হইতে না হইতে একিলীসের রোষাগ্নি প্ৰজলিত হইয়া উঠিল ; রোষাগ্নিদীপ্ত রদ্রমূর্তি হুঙ্কার করিয়া গর্জন করিল ; পরক্ষণেই দেখিতে পাই, মহাবীর হেক্টরের শবদেহ সেই ভীমকৰ্ম্মার রথচক্রে নিম্পেষিত হইয়া রুধিরধারায় রণক্ষেত্র শোণিতাক্ত করিতেছে ও মর্ত্যে নরগণের ও আকাশে দেবগণের মুগ্ধনেত্র বিস্ফারিত হইয়া সেই ক্রর কৰ্ম্মের প্রতি নীরবে নিক্ষিপ্ত রহিয়াছে । পাঠকবর্গ যদি এতক্ষণ বুঝিয়া থাকেন, কৃত্তিবাস পড়িলেই বাল্মীকি পড়ার কাজ হইবে, এবং যে সকল পাচালী-পয়ার শুনিয়া কাশীদাস ভারতকথা বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন , সেই পাঁচালী পড়িলেই জার দ্বৈপায়ন-ঋষির শরণ লইতে হইবে না, তাহা হইলে লেখকের নিতান্ত দুর্ভাগ্য । বঙ্গরিকাশ্রমযাত্রী যাহারা হিমালয়ের চড়াইউতরাই অতিক্রম করিয়া আসিয়াছেন, কৈলাসঘাত্রী ধিনি ষোলহাজার ফুট উপরে উঠিয়া নীতি-পাস অতিক্রম করিয়া আসিয়াছেন, এমন কি দাৰ্জিলিঙে কিংবা সিমলা-শৈলের আলোকমণ্ডিত রাজপথে যাহারা বিহার করিয়া আসিয়াছেন, তাহারা হিমালয়ের যে সৌন্দৰ্য্য দেখিয়াছেন, হিমালয়ের পাদদেশের সমতলবাসীর পক্ষে তাহা ইক্রিয়মনের অগোচর, সন্দেহ নাই। কিন্তু আশঙ্কা হয়, হিমালয়ের এক এক দেশে,