পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

هناd • বঙ্গদশন । [ ২য় বর্ষ, মাঘ । করে। একজন অনভিজ্ঞ লোক যদি শোনে যে, আমেরিকা-রাজ্য প্রজাতন্ত্র, তবে তাহার মনোমধ্যে সহসা এইরূপ একটা ভ্রম জন্মিতে পারে যে, তবে বুঝি আমেরিকা-রাজ্যে রাজকাৰ্য্যের কোনোপ্রকার বিলিব্যবস্থা নাই-রাজা নাই, তার আবার রাজকাৰ্য্য—মাথা নাই, তার আবার মাথাব্যথা ! রাজা না-ই বটে ? আমেরিকারাজ্যের মস্তক যিনি—যাহার নাম প্রেসিডেণ্ট—তিনি তবে কি ? তিনি রএ আকার রা, জএ আকার জা নহেন, ইহ দেখিতেই পাওয়া যাইতেছে ; কিন্তু তথাপি রাজার যাহা কাৰ্য্য, তাহা তাহাকে ষোলো-অান মাত্রায় করা চাই, রাজোচিত গুণ র্তাহার ষোলো-অান মাত্রায় থাকা চাই, রাজোচিত সম্মান তাহাকে ষোলোআনা মাত্রায় দেওয়া চাই ;—তবে আর রাজার বাকি রহিল কি ? তুমি বলিতেছ যে, শঙ্করাচার্য্যের মতে চরাচর বিশ্বব্রহ্মাও কিছুই না। তবে কি তিনি “কিছুই না” দলন করিবার জন্য দলবল সমভিব্যাহারে দিগ্বিজয়ে প্রবৃত্ত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ষময় দাপাদাপি করিয়া বেড়াইয়াছিলেন ? অতএব মুখে যিনি যাহা বলুন না কেন—সকলেই মনে মনে জানেন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিলক্ষণই একটা-কিছু ! শঙ্করাচাৰ্য্য না হয় বলিলেন অবিদ্যা,কপিলমুনি না হয় বলিলেন প্রকৃতি, পুরাণতন্ত্ৰকৰ্ত্তারা না হয় বলিলেন শক্তি, তাছাতে কি আইসুে যায় ? নামে কি আইসে ধায়! শ্ৰীমচ্ছঙ্করাচাৰ্য্য তো “অবিদ্যা” বলিবেনই। তাহার শাস্ত্রে শুধু কেবল জ্ঞানেরই সংস্থান রহিয়াছে, তা ছাড়া প্রকৃতির সংস্থান নাই ; অথচ প্রকৃতি স্মৃতিরেকে কোনো কাজই চলে না ;-জ্ঞানের কাজও চলে না। কিন্তু প্রকৃতিকে তিনি আপন শাস্ত্র হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিয়াছেন —তাহাকে পাওয়া যাইবে কিরূপে ? তিনি তাহার উপায় করিলেন এই যে, প্রকৃতিকে অজ্ঞান বা অবিদ্যা নামে অবগুষ্ঠিত করিয়া জ্ঞানেরই উন্টাপিট বলিয়া গ্রহণ করা যাক। অবিদ্যা’র গোড়া’তে অ রহিয়াছে, প্রকৃতির গোড়া’তে প্র রহিয়াছে। অ কিনা না— কিছুই না ; প্র কিনা প্রধান—সৰ্ব্বপ্রধান বস্ত । নামে, এইরূপ, দুয়ের মধ্যে আকাশপাতাল প্রভেদ । কিন্তু কাজে শাস্কর-শাস্ত্রের অবিদ্যাও যা, সাংখ্য-শাস্ত্রের প্রকৃতিও তা, তন্ত্র-শস্ত্রের শক্তিও তা—একই। “কাজে” শব্দের অর্থ এখানে তত্ত্বজ্ঞানের কাজে । ভজন-সাধনের কাজে তিনের মধ্যে বিশিষ্টরকমের প্রভেদ আছে, এ কথা আমি খুবই মানি ; কিন্তু এ প্রভেদ বর্তমান প্রবন্ধের প্রসঙ্গ-বহির্ভূত। প্রকৃত প্রস্তাব হইতে একটু যেন দূরে সরিয়া পড়া হইয়াছে, অতএব এখানে আর কালবিলম্ব না করিয়া গন্তব্যপথে প্রত্যাবৰ্ত্তন করা যা’ক্‌ ৷ যদিও সত্তা, শক্তি এবং জ্ঞান পরম্পরের সহিত অবিমোচ্য সম্বন্ধস্থত্রে জড়িত, তথাপি এরূপ হওয়া কিছুই বিচিত্র নহে যে, কোনো বস্ত দেখিলে প্রধানত সত্তা চক্ষে পড়ে, কোনো বস্তু দেখিলে প্রধানত শক্তি চক্ষে পড়ে, কোনো বস্তু দেখিলে প্রধানত জ্ঞান চক্ষে পড়ে। অন্তঃকরণ-রাজ্যে প্রাণের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে সত্তা’র ভাব প্রধানত চক্ষে পড়ে ; তার সাক্ষী—ক্টোকে বলে