পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१७ বঙ্গদর্শন । [২য় বর্ষ, ফাল্গুন । হইতে পারে না। বিস্তৃতভাবে প্রমাণ প্রয়োগ করিতে গেলে, উদ্দিষ্ট বিষয়টির অবতারণায় বড়ই বিলম্ব হইবে। এখানে এই পৰ্যয় বলিলেই যথেষ্ট ঘে, পুৰ্ব্বে মহাভারত-কথা-সংবলিত অন্যান্ত গ্রন্থ প্রচারিত হইয়া থাকিলেও, আমাদের পরিচিত প্রচলিত মহাভারত অপেক্ষাকৃত অনেক আধুনিক ; হয় ত তৃতীয় শতাব্দীর । এই মহাভারতে পাৰ্ব্বতীপতির যেগ্রকার পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা উল্লেখ করিতেছি। সৌতির সময়ে বৈদিক রুদ্রের অনেক পরিবর্তন হইয়াছে দেখিতে পাই ; তবুও তিনি এবং মহাদেব সম্পূর্ণ এক ব্যক্তি নহেন। উদ্যোগপর্বের ১১৬তম অধ্যায়ে আছে যে, যেমন ইন্দ্রের পত্নী শচী, নারায়ণের পত্নী লক্ষ্মী, তেমনি বরুণের পত্নী গৌরী, সাগরের পত্নী জাহ্লবী, এবং রুদ্রের পত্নী রুদ্রাণী। আবার যেখানে থাটি একালের মহাদেবের কথা পাই, সেখানে তাহার পত্নী পাৰ্ব্বতী বা উমা । তখনও রুদ্রাণী, গৌরী কিংবা অম্বিক, উমার সহিত একাত্মতা লাভ করেন নাই । শান্তিপর্বের ২৮২তম অধ্যায়ে দক্ষযজ্ঞেয় বর্ণনা আছে। ঐ যজ্ঞে সকল দেবতারাই নিমন্ত্রিত হইয়াছিলেন, কিন্তু মহাদেবের নিমন্ত্রণ হয় নাই । শৈলরাজছহিতা পাৰ্ব্বতী ক্ষুণ্ণ হইয়। ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন । মহেশ্বর প্রশ্নের উত্তরে বলিলেন যে, পূৰ্ব্বকাল হুইতে দের তার যে বিধান করিয়াছেন, তাহাতে কোন যজ্ঞেই ঙাহার ভাগ কল্পিত হয় নাই। স্বামীর এত প্রভূত সত্বেও তিনি দেবগণের মধ্যে নগণ্য, ইহা দেবীর সহ হইল না। মহাদেব তখন আত্মমাহাত্ম্যপ্রতিষ্ঠার জন্ত, দক্ষযজ্ঞ ধ্বংস করিলেন। যজ্ঞনাশের পর, ব্ৰহ্মা মহা দেবকে স্তুতি করিয়া বলিলেন, “হে মহাদেব, কেহই তোমার ক্রোধে শান্তিলাভ করিতে পারে না ; অতএব দেবতারা সকলেই তোমাকে যজ্ঞভাগ প্রদান করিবেন।” মহাদেব প্রীত হইয়। দক্ষকে যজ্ঞফল দান করিয়া চলিয়া গেলেন । ২৮৩তম এবং ২৮৪তম অধ্যাtয় এই কথাটির একটু পরিবৰ্ত্তিত ভাবে অযথা পুনরাবৃত্তি হইয়াছে বলিয়া, ঐ দুইটি অধ্যায় প্রক্ষিপ্ত বলিয়া মনে হয় । তাহ। মনে না করিলেও, মহাভারতে দক্ষযজ্ঞের যে বিবরণ পাওয় যায়, তাহাতে জানিতে পার৷ যায় যে –(১) দক্ষযজ্ঞসম্বন্ধীয় সম্পূর্ণ পৌরাণিক উপাখ্যান সে সময়ে স্বল্প হয় নাই। এখানে যজ্ঞ-বধ আছে, কিন্তু দক্ষের মুণ্ডচ্ছেদ নাই ; পাৰ্ব্বতী আছেন, কিন্তু তিনি দক্ষরাজদুহিতাও নহেন এবং যজ্ঞে র্তাহার দেহত্যাগও হয় নাই । ( ২ ) রুদ্র - বৈদিককালে যজ্ঞভাগী ছিলেন ; কিন্তু মহাদেবকে যজ্ঞভাগের জন্ত স্বত্ব সাব্যস্ত করিতে হইল । মহাদেব মহাভারতরচনার সময়ে চতুমুখ, পিনাকপাণি, ত্রিনেত্র এবং নীলকণ্ঠ । কিন্তু তাহার এই সকল অবয়ববৃদ্ধিও যে ধীরে ধীরে হইয়াছিল, তাহাও বুঝিতে পারা যায়। অনুশাসনপর্বের ১৪০তম এবং ১৪১তম অধ্যায়ে আছে যে, একদিন শৈলজা উমা পরিহাসচ্ছলে পশ্চাদৃভাগ হইতে আসিয়া মহাদেবের চক্ষু দুইটি আবরণ করিয়া ধরিলেন। ফল এই হইল যে, সমগ্র দৃষ্টি অন্ধকারসমাচ্ছন্ন হইল, প্রলয়কাল আসিল ভাবিয়া, চরাচর ত্রাসযুক্ত হইল। ৬ মজুদের