পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

నిరి বঙ্গদর্শন । টানিয়া খাড়া রাখাই কঠিন হয়। কাজের মধ্যেই প্রেমের মূল না থাকিলে, ভোগের বিকাশ পরিপূর্ণ এবং স্থায়ী হয় না। মহেন্দ্রও আপনার বিমুখ সংসারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া আপন প্রেমোৎসবের সকল বাতিগুলাই একসঙ্গে জালাইয়া খুব সমারোহের সহিত শূন্তগুহের অকল্যাণের মধ্যে মিলনের আনন্দ সমাধা করিতে চেষ্টা করিল। আশার মনে সে একটুখানি খোচা দিয়াই কহিল, "চুনি, তোমার আজকাল কি হইয়াছে বল দেখি ? মাসী গেছেন, তা লইয়া অমন মন ভার করিয়া আছ কেন ? আমাদের দু’জনার ভালবাসাতেই কি সকল ভালবাসার অবসান নয় ?” আশা দুঃখিত হইয়া ভাবিত, “তবে ত আমার ভালবাসায় একটা কি অসম্পূর্ণতা আছে ! আমি ত মাসীর কথা প্রায়ই ভাবি; শাশুড়ি চলিয়া গেছেন বলিয়া ত আমার ভয় হয় —” তখন সে প্রাণপণে এই সকল প্রেমের অপরাধ ক্ষালন করিতে চেষ্টা করে । এখন গৃহকৰ্ম্ম ভাল করিয়া চলে না— চাকর-বাকররা ফাকি দিতে আরম্ভ করিয়াছে ! একদিন ঝি অসুখ করিয়াছে বলিয়ু আসিল না, বামুনঠাকুর মদ থাইল্প নিরুদ্দেশ হইয়া রহিল। মহেন্দ্র আশাকে কহিল—“বেশ মজা হইয়াছে, আজ আমরা নিজের রন্ধনের কাজ সারিয়া লইব ।” মহেন্দ্র গাড়ি করিয়া নিউমার্কেটে বাজার করিতে গেলেন। কোন জিনিষটা কি পরিমাণে দরকার, তাহ তাহার কিছু মাত্র জানা ছিল না—কতকগুলা বোঝা [8छार्छ। লইয়া আনন্দে ঘরে ফিরিয়া আসিলেন। সেগুলা লইয়া যে কি করিতে হইবে, আশাও তাহা ভালরূপ জানে না। পরীক্ষায় বেলা দুটা তিনটা হইয়া গেল এবং নানাবিধ অভূতপূৰ্ব্ব অর্থাদ্য উদ্ভাবন করিয়া মহেন্দ্র অত্যন্ত আমোদ বোধ করিলেন । আশা মহেঞ্জের আমোদে যোগ দিতে পারিল না, আপন অজ্ঞতা ও অক্ষমতায় মনে মনে অত্যন্ত লজ্জা ও ক্ষোভ পাইল । ঘরে ঘরে জিনিষপত্রের এমনি বিশৃঙ্খলা ঘটিগাছে যে, আবণ্ডকের সময় কোন জিনুিষ খুজিয়া পাওয়াই কঠিন। মহেন্দ্রের চিকিৎসার অস্ত্র একদিন তরকারী কুটিবার কার্য্যে নিযুক্ত হইয়া আবৰ্জ্জনার মধ্যে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করিল এবং তাহার নোটের থাত হাতপাখার একৃটিনি করিয়া রান্নাঘরের ভস্মশয্যায় বিশ্রাম করিতে লাগিল । এই সকল অভাবনীয় ব্যবস্থাবিপৰ্য্যয়ে মহেন্দ্রের কৌতুকের সীমা রহিল না, কিন্তু আশা ব্যথিত হইতে থাকিল। উচ্ছ,স্থল যথেচ্ছাচারের স্রোতে সমস্ত ঘরকল্প ভাসাইয়া হাস্যমুখে ভাসিয়া চলা বালিকার কাছে বিভীষিকাজনক বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। একদিন সন্ধ্যার সময় দুইজনে ঢাকাবারান্দায় বিছানা করিয়া বসিয়াছেন। সম্মুখে খোলা ছাদ । বৃষ্টির পরে কলিকাতার দিগন্তব্যাপি-সৌধশিখরশ্রেণী জ্যোৎস্নায় প্লাবিত । বাগান হইতে রাণীকৃত ভিজা বকুল ংগ্ৰহ করিয়া আশা নতশিরে মালা গাঁথিতেছে। মহেন্দ্র তাহ লইরা টানাটানি করিয়া বাধা ঘটাইয়া প্রতিকুল সমালোচনা করিয়া অনর্থক একটা কলহ সৃষ্টি করিবার