পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫২ বঙ্গদর্শন। [ আশ্বিন । মাসের দ্বাদশ যাত্রার ইহা অদ্যতম। বৈশাখী পূর্ণিমা,এই যাত্রার দিন, বৈশাখী পূর্ণিমায় এই ফুলের মহোৎসব। কেবলই ফুল,—বিগ্রহে, সিংহাসনে, মন্দিরে, বাহিরে, কেবল বিচিত্র পুষ্পরাশির সন্মোহন সৌন্দর্য্য ! নাটমন্দিরের ঝাড়-লণ্ঠন হইতে স্তম্ভগুলি পৰ্য্যস্ত কুসুমদামশোভিত , নরনারীর কণ্ঠে প্রসাদী মালা, হাতে ফুলের স্তবক ; সমস্ত মালা, স্তবক এবং বিক্ষিপ্ত পুষ্পসম্ভার চন্দনামুলিপ্ত । চন্দনগন্ধে কুসুমসৌরভ অমু প্রাণিত হয় বলিয়াই বুঝি ইহার নাম ‘চন্দনী যাত্ৰা ।” এই কুসুমমুকুমার উৎসবে বল্যের পল্লী প্রকৃতি যে এক আনন্দরসধারায় নিমগ্ন হইয়। যাই ত, তাহা স্মরণ করিলে আজি ও একটা উৎকণ্ঠা কুল স্ব-রসাল ভাব অন্তঃকরণকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে ! এই উৎসব যদি ও দেবালয়বিশেষেই অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে, কিন্তু তখন তাহাতে সমস্ত ' গ্রামবাদী সমান উৎসাহ, সমান আনন্দ, সমান উৎসবাঁকুলত৷ বহন করিত ; তখনকার পক্ষে ইহা ও সাৰ্ব্বজনীন উৎসব । ছোটখাট আরও অনেক উৎসব বৈশাখের দিনগুলিকে নন্দনীয় করিত, সে সকলের উল্লেখে প্রবন্ধ একান্তই বাড়িরা যাইবে, কাজেই সেগুলিকে বর্জন করা (*1 কাচা আম কুড়ান এই সমরের একটা পরম উল্লাস । বাতাস না হইলে আম পড়ে না, কাজেই পবনদেবকে আম্ৰতরুর শাখাসঞ্চালনের জন্ত কত যে অম্বুরোধ করা গিয়াছে, তাহার সীমা নাই। বলা ৰাহুল্য, বালক-বালিকাগণের করুণ প্রার্থনাতেই হউক, আর নায়িকালাভের উৎসাহেই হউক, চৈত্রের শেষাশেষী হইতে বৈশাখের শেষ পর্য্যন্ত পবনদেব যথেষ্টই উত্তেজিত হইয় উঠেন । কাজেই অrম কুড়ান কৰ্ম্মট স্বচ্ছন্দেই চলিয়া থাকে । সেই আমকুড়ান উপলক্ষ্যে বৃষ্টিতে ভিজা, ঝড়ভগ্ন ডালপালার আঘাত লাগা, হাত পা-কাট। প্রভৃতি অনেক উপসর্গ ছিল, কিন্তু তাহাতে তখন আমকুড়ানোর মর্য্যাদা কিছুমাত্র হ্রাস হইত না । গৃহিণীগণ যদি ও অনেক সময় নান। অtশঙ্কা করির ঝড়বৃষ্টির উপদ্রবে ছেলেদের বাহির হইতে বাধা দিতেন, কিন্তু কোন প্রকারে তঁহাদের হাত ছাড়াইয়া প ৭াইতে পারিলে, যখন থাল, ডাল ও টুকরি ভরিয় ভরিয়া আম্রসন্তার আনিয়া তাহীদের সম্মুখে ধরা হইত, তখন তাহার যে খুব অসন্তুষ্ট, এরূপ মনে হইত ন । তখন তরুণ এবং প্রৌঢ়গণ পর্য্যন্ত অনেক সময় শিশুদের সঙ্গী হইতেন, এবং এ স্তঃপুরের আমকুড়ান-ব্যাপারে গৃহলক্ষ্মীগণ একমাত্র আপনাদেরই অধিকার অক্ষুঞ্জ রাখিতেন। যখন সেই ধারাসিক্ত কুলম্বন্দরীগণ আঞ্জবস্ত্রে কটিদেশ-বন্ধন-পূৰ্ব্বক ডাল। হাতে করিয়া অস্তঃপুরের আন্দোলিত আম্রকুল্পে সঞ্চরণ করিতেন, আর তাহাদের আলুলায়িত সিক্ত কুন্তলজালে গণ্ডদেশ পৰ্য্যন্ত আচ্ছন্ন করির জলবিন্দু ক্ষরিত হইভ এবং স্বভাবজাত লভার গতিতে হেলিয়া দুলিয়া তাহারা পরস্পরে হারাঞ্জিতি ধরিয়া তাড়াতাড়ি কাড়াকড়ি করিয়া আম কুড়াইয়া ডাল ভরিতেন, তখন উন্মত্ত পবন নিশ্চয়ই নিজেকে পুরস্কৃত জ্ঞান কল্পিত । তখন