পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- هوف বঙ্গদর্শন। [ অগ্রহায়ণ । কল্লোল, নদীর কলকল, মাঠের ছলছল, বিলের তরুতর অহনিশ চলিতেছে। প্রাস্তরের তৃণ-ধান্ত জলের উপর ভাসিতেছে। চাষীরা সেই জলে বক্ষ পর্য্যন্ত নিমগ্ন করিয়া পাকাধান কাটিতেছে, আর ডিঙিতে বোঝাই দিতেছে। মাঝে মাঝে এক এক খানি নৌকা ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া চর্চর করিয়া চলিয়। যাইতেছে । নানা কৰ্ম্মে নানাদেশের বিচিত্র রকমের তরণিশ্রেণী নদী, খাল, বিল, প্রান্তরে দশদিকে ছুটিয়াছে। কুল-মুন্দরীগণ বর্ষাকালে একবার অবশ্যই পিতৃভবন, মাতুলভবন প্রভৃতি হইতে সাদর নিমন্ত্রণ লাভ করিয়া থাকেন। সেই উপলক্ষ্যে স্মিতবদন রমণীদিগকে লইয়া চারিদিকে তরণিশ্রেণী হেলিয়া ফুলিয়া চলিয়াছে ; আর সেই তরণীর অগ্রভাগ উৎসুকা প্রমদাদিগের যত্নোত্তোলিত কুমুদকহুলারে— সালুকফুল-পানিফলে—বিচিত্র জলীয় লতায় পাতায় সমাচ্ছন্ন হইয়া যাইতেছে । কত শাফুলার মালা ও অলঙ্কার প্রস্তুত করিয়া, কত রকমের শাক-তরকারি সংগ্ৰহ করিয়া, র্তাহারা বর্ষার আনন্দ পূর্ণহদয়ে উপভোগ করিতেছেন, তাহার সংখ্যা কে করে ? বর্ষার জলে যখন চতুর্দিক ভাসিয়া যায়, তখন গ্রামগুলি মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র দ্বীপের মত তাসিতে থাকে । সেই দ্বীপাধিবাসীরা কোনপ্রকার তরণির সহায়তা ছাড়া গ্রাম ছাড়িয়া একপদ অগ্রসর হইতে পারে না ; কাজেই ঘাটে ঘাটে ক্ষুদ্র তরি, কলাগাছের ভেল। বা বাশের ‘ভেরো” । ঝুলন বা হিন্দোলন বৃন্দাবনের রসলীলার অন্ততম হইলেও, এক্ষণে তাহা সৰ্ব্ব দেশব্যাপী উৎসব —তবে সৰ্ব্বগৃহব্যাপী নহে। শ্রাবণের শুক্ল একাদশী হইতে পূর্ণিমা পর্য্যন্ত পাচদিন অথবা ত্রয়োদশী হইতে পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনদিন দেবালয় বা ব্যক্তিবিশেষের গৃহে ঝুলন হইয়া থাকে। ঝুলন নিকট হইলেই গ্রামের উৎসাহী দল সিংহাসনের কারুকার্য্যে, নাটমন্দিরের সাজসজ্জায় ব্যস্ত হইয় উঠেন। ঝুলন-আরম্ভের পুৰ্ব্বদিনে বা যে দিন বুলন, সেই দিন প্রাতঃকালে সুনিৰ্ম্মিত উজ্জল সিংহাসনথানি ভূমিতল হইতে কিঞ্চিৎ উদ্ধে তুলিয়া পায়াতে দড়ি বাধিয়া দেবমণ্ডপের উপরিভাগ হইতে ঝুলাইয়া দেওয়া হয় । সিংহাসনের নিম্নে কলাইপূর্ণ কতকগুলি ঝুমুর গ্রথিত থাকে এবং সম্মুখদিকের দুটি পায়াতে দু’গাছি সুন্দর স্বরঞ্জিত রজু সংলগ্ন করিয়া দ্বারের পাশ্বে বারেণ্ডায় রাখা হয়। ঝুলন রজনীর ব্যাপার । বিহিত দিনে সন্ধ্যার পর সিংহাসনে বিগ্রহ স্থাপন করিলেই ভক্তবৃন্দ বাহির হইতে ঐ রজু আকর্ষণ করিতে থাকেন, সেই আকর্ষণে সমস্ত সিংহাসন আন্দোলিত হইতে থাকে। টানে টানে তালে তালে সিংহাসন আগে আঁসে, আবার পিছাইম্বা যায় ; সিংহাসনের কম্পনে বিচিত্র-রত্নালঙ্কার-ভূষিত বিগ্রহেরও চঞ্চলত লক্ষিত হয় ; আর নীচের ঝুমুরগুলি ভূমিতলে সংলগ্ন হইয়া ঝুমঝুম্ ঝুমুরঝুমুর ধ্বনি করিতে থাকে। সিংহাসনের দুই পাশ্বে দুইটি বৈঠকী ঝাড়,—উজ্জল আলোকে সিংহাসন উদ্ভাসিত করিয়া তোলে। সম্মুখে দর্শকমণ্ডলী আলোক-মালা-সমুজ্জল নাটমন্দিরের বাহিরে ও বারেণ্ডায় দাড়াইয়া