পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম-সংখ্যা । ] পল্লীপাৰ্ব্বণ । ૭૧૭, হা হা হায় বলিয়া চীৎকার করিয়া -উঠিতেছে। মাল্লা-মাবীদের সাজসজ্জাও বিচিত্র রকমের। কোন দল লাল পাগড়ী, কোন দল নীল পাগড়ী, কোন দল হরিদ্রাবর্ণ পাগড়ীতে মস্তক বেষ্টন করিয়াছে। কোন বড় নৌকা বিশেষ দক্ষতার সহিত সজ্জিত श्हे ब्रां८छ्,-कॉफ़-शर्छन छैi७ॉन श्हेग्राँ८छ्, তার মধ্যে নৃত্য-গীত-বাদ্যের তুফান ছুটিয়াছে, আর সেই সম্মোহনী তরণী হেলিয়া ছলিয়া ধারমন্থরগতিতে ইতস্তত বিচরণ করিতেছে । বঙ্গ রা, ভাওলিয়া, ‘মোটা, ডিঙি প্রভৃতি দর্শকমণ্ডলীর অগণ্য তরী দুই পাশ্বের নিরাপদ স্থানে অতি সাবধানে বাধা রহিয়াছে ; নিশানে নিশানে থলী’ ছাইয়া ফেলিয়াছে; নৌকার বাহিরে, ভিতরে, ছাপরের উপরে, কেবল মনুষ্যমুণ্ড । কোন কোন সৌধীন বড় লোকের নৌকা হইতে ঘনঘন বন্দুকের আওয়াজ হইতেছে, কোন নৌকায় বা ডঙ্কা পিটান হইতেছে। থানার দারগণ সঙ্গী সহ "রথ দেখা ও কলা বেচা’ প্রবচনের সার্থকভা সম্পাদন করিতেছেন, টিকরা-ধ্বনি করিয়৷ সেই ‘লাল-পাগড়ী’র নৌকা চতুর্দিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। বলা বাহুল্য, নিকটে মহকুমা থাকিলে এইরূপ ক্ষেত্রে হাকিম, উকীল, মোক্তার প্রভৃতি যথাযোগ্য আড়ম্বরে থলীর শোভাবৰ্দ্ধন করিতে কিছুমাত্র উদাসীনতা প্রকাশ করেন না । ক্রমে বেলা শেষ হইয়া আসিতে লাগিল। তখন অস্ত আমোদ ছাড়িয়া বাচের নৌকায় পরস্পরে বাজি ধরিতে আরম্ভ করিল। দুই নৌকায় চারি নৌকায় বাজি ধরিয়া সকলেই প্রাণপণে আপন আপন তরণী বিদ্যুবেগে চালাইতে লাগিল। তখন নৃত্য, গীত, বাদ্য, সমস্ত থামিয়া গেল । তরণিশ্রেণীর তীব্র পরিচালনে নদীতে প্রবল তরঙ্গ, সবলক্ষিপ্ত বৈঠার তাড়নে উৎক্ষিপ্ত জলরাশি, আর জয়লিপ্ত চালকগণের বলদৃপ্ত উচ্ছ্বাসপূর্ণ অব্যক্ত অট্ট কলরোল তখন উদ্যমে উৎসাহে চতুর্দিকৃ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল ! অবিরাম দলে দলে দৌড়ের নৌকা ঝড়ের মত ছুটিরাছে, চালকের উন্মত্তের মত “বৈঠা চালাইতেছে, কেবল মাঝি এই ভয়ানক তুফানে স্থিরধীর-ভাবে নৌকার গতি ঠিক রাখিতেছে । কেহ জিতিল, কেহ হরিল, কোন কোন দল সমান হইল। যাহারা জিতিয়াছে, তাহারা ফিরিবার সময় নৌকার গলুইটি একখানি রুমাল বা বস্ত্রখণ্ডে আবৃত করিয়াছে—ইহ জয়চিহ্ল ! জয়শীল বাহকদের মনে, মুখে, ভঙ্গীতে হাসির রাশি। পরাজিতের ক্লিষ্ট ক্ষুণ্ণ বিষণ্ণ মনে ফিরিতেছে,—আর উপস্থিত অপমানের প্রতিশোধের উপায় ভাবিতেছে । এই জয়পরাজয় লইয়া, চার্লাইবার গুণদোষ লইয়া, অনেকসময় চাচাকুলের মধ্যে মারামারির পাল আরম্ভ হয় ; তুবে ‘লালপাগড়ী’র তয়ে সেটা অবশু সকল সময় তেমন অগ্রসর হইতে পারে না । ভাসান উপলক্ষেই থিলী’ জমে বটে, ভাসান কিন্তু প্রায়ই পূৰ্ব্বাহ্লে স্ব স্ব গ্রামের নদী বা নিজেদের পুষ্করিণীতে হইয়া যায়। অনেকে ‘দেবীপ্রতিমা’ সযত্নে গৃহে রাখিয়া দেন । “থলী’ভে যে কয়খানি-প্রতিম। আইসে, সন্ধ্যা হইতে না হইতেই তৎসমস্তের ভাসান