পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম-সংখ্যা । ] গুলির সমবেত ধ্বনি যে পূজার জাক্‌জমকের একটা প্রধান অঙ্গ, এ বিশ্বাস তাহাদের কিছুতেই টলাইতে পারে না । অধিবাস-রজনীতেই দূরদূরান্তর হইতে শ্বেত-রক্ত পদ্মরাশি ও বিস্বপত্রের সম্ভার উপস্থিত হইতে থাকে ; বাড়ীর নাটমন্দিয়েয় সাজসজ্জা সমাধা হইয়া যায় ; স্থানে স্থানে বিচিত্র পতাকা উড়িতে থাকে । প্রভাত হইতে না হইতেই পুজার আয়োজনে সকলে ব্যস্ত। কি অটুট উৎসাহে রাশি-রাশি পুষ্প-বিল্বপত্র ও আর আর পূজার উপকরণ সংগৃহীত হইল, মণ্ডপ ভরিয়া নৈবেদ্য সুসজ্জিত হইতে লাগিল, পুরোহিতগণ মণ্ডলাদি নিৰ্ম্মাণ করিলেন । কি আন্তরিক অমুরাগে সকলে মিলিয়া স্বগৃহের দ্যায় এই মহামহোৎসবের যথাযোগ্য বিচিত্র কৰ্ম্ম অক্লাস্তযত্নে সুসমাহিত করিতে লাগিলেন । কৰ্ম্মকর্তা যথোচিত উপচারে পুজক, তন্ত্রধারক ও চণ্ডীপাঠককে ভক্তির সহিত বরণ করিলেন । পুঞ্জ আরম্ভ হইল। শুভ্রবাসা পুরোহিতগণের প্রতি সকলে ভক্তিবিনম্র সাধুভাব পোষণ করিতে লাগিলেন । ঢক্কার নিনাদে, শঙ্খের শব্দে, ঘড়ির্কাসরের রোলে, বালকের গোলে, উলুধ্বনিতে, ভক্তবৃন্দের গীতে, সমস্ত পল্লীপ্রকৃতি সমাচ্ছন্ন হইয়। উঠিল । ধূপের গন্ধে, কুমুম-চন্দনের সৌরতে, দশদিক্‌ আমোদিত হইল । নববস্ত্রমণ্ডিত বালকবালিকাগণ চারিদিকে দলে দলে আমোদে আহলাদে নাচিয়া বেড়াইতে লাগিল । পাছে কোন অঙ্গহানি হয়, এই আশঙ্কায় গৃহস্বামী ও গৃহকত্রীর মুখে সদা বিনয়বিনম্র একটি 2 o' পল্লীপাৰ্ব্বণ । স্নিগ্ধকোমল দীনভাব লাগিয়াই আছে । ক্ষণে ক্ষণে উত্তরীয়ধারী কৰ্ম্মকৰ্ত্ত কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রতিমার সম্মুখে দীনভাবে দাড়াইয়া মনে মনে নিজের শতক্ৰটি ও অপরাধ জানাইয়া মায়ের চরণে ক্ষমাভিক্ষা করিতেছেন । পূজা সমাপ্ত হইল। আবার বাদ্যরবে গগনতল বিদীর্ণ হইতে লাগিল, পুরোহিত মণ্ডপ-প্রাঙ্গণ চণ্ডীপাঠের ধ্বনিতে পূর্ণ করিয়া তুলিলেন। তখন পরিস্কাত শুদ্ধবসন আত্মীয়কুটুম্ব, স্বগ্রামবাসী স্বজাতীয় নরনারী, দলে দলে উপস্থিত হইয়া দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিতে লাগিলেন। পুরোহিতের উচ্চারিত খণ্ড খণ্ড শ্লোকের প্রতিধ্বনি পুরুষসম্প্রদায়ের বিচিত্ৰকণ্ঠে ধ্বনিত হইতে লাগিল। বারক্রয় তাহার এইরূপে সচন্দন পুষ্প-বিল্বপত্রের অঞ্জলি প্রতিমার চরণে বা ঘটে উৎসর্গ করিলেন । অঙ্গনার পুরোহিতের মন্ত্র ভক্তির সহিত মনে মনে পাঠ করিয়া পর্দার আড়াল হইতে পুষ্পাঞ্জলি দান করিতে লাগিলেন । পরে সকলে গলায় বস্ত্ৰ দিয়া জোড়হাতে দশভুজার সম্মুখে দাড়াইয়া মনে মনে যথারুচি নানা প্রার্থনা আবৃত্তির পর মাটিতে লুটাইয়া প্রণাম করিয়া অন্যদিকে প্রস্থান করিলেন। তখন ভোজনের—জলযোগের—প্রসাদপ্রাপ্তির সার্থক কৰ্ম্ম আরম্ভ হইয়া গেল । কোনখানে নিমন্ত্রিতগণের, কোথাও বা রবাহুতের পংক্তি জলপানাদিতে বসিয়া গেলেন। পুজার বিনাবেতনের স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত কৰ্ম্মচারীরা মহোল্লাসে এই পংক্তিতোজনের তত্ত্বাবধান করিয়া শেষে আপনাদের উদরপূৰ্ত্তির