পাতা:বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (কায়স্থ কাণ্ড, প্রথমাংশ, রাজন্য কাণ্ড).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২ বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস [ ১ম অধ্যায় । করিয়া উপস্থিত হইতেন, সে স্থলে তাহদের উক্তিমাত্র লিখিয়া লইতে হইত, কোনমতেই র্তাহাদিগকে জেরা করা যাইত না । কিন্তু “ব্যবহার-সমতার” প্রতিষ্ঠা করিয়া অশোক এই চিরন্তন অধিকার হইতে তাহাদিগকে বঞ্চিত করিলেন। আজ কি না, তাহাদিগকেও ঘৃণিত, অস্পৃগু, অনাৰ্য্য এবং শূদ্র প্রভৃতির সঙ্গে সমানভাবে শূলারোহণ ও কারাবাসাদি ক্লেশ সহ করিতে হইবে ! অশোকের বংশ ব্রাহ্মণের চক্ষুশূল হইয়া পড়িল। ইহার পুর, আবার যখন জীব-দুঃখকাতর অশোক জীবহিংসা রচিত করিলেন, তখন সেই বিদ্বেষগ্নি ধূমায়িত হইয়া উঠিল। একবার মনে সন্দেহের ও অবিশ্বাসের ছায়াপাত হইলে প্রতি কাৰ্য্যেই দুরভিসন্ধি দেখিতে পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণেরা ভাবিলেন, এই যে জীবহিংসা-নিবারণ, ইহার ফুল কেবল ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মবিদ্বেষী বৌদ্ধরাজার ব্রাহ্মণ নিৰ্য্যাতনের পৃহা। জীবহিংসা রহিত হইলে যজ্ঞপূজাদিতে বলিও রহিত হইবে। বলিপ্রিয় ব্রাহ্মণসমাজ আর সহ করিতে পারলেন না। অশোকের উপর তাহার একেবারে খড়গহস্ত হইয়া উঠি লন। ইহার উপর অশোক ব্রাহ্মণদিগের আধিপত্য ও মাহায্যের মূলে কুঠারাঘাত করিয়া “ধৰ্ম্মমহামাত্র” নামে এক নুতন পদের স্বষ্টি করিলেন। সামাজিক ও নৈতিক ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় যে সকল বিধি ব্যবস্থা পূৰ্ব্বে ব্রাহ্মণদিগের হস্তে ন্তস্ত ছিল, যাহার উল্লঙ্ঘন করিলে ব্রাহ্মণদিগের ব্যবস্থানত প্রায়শ্চিত্ত ও দ গুগ্রহণ করিতে হইত, সেই সকলের ভার এখন তাহাদিগের নিকট হইতে কাড়িয়া লইয়া এই সকল ধৰ্ম্মমহামাত্রদিগের হন্তে সমৰ্পিত হইল। ইহার পর আবার বিস্ফোটকের উপর লবণ নিক্ষেপ করিয়া অশোক সগৰ্ব্বে প্রচার করিলেন যে, “এতদিন যাহারা ভূদেব বলিয়া পুজিত হইয়া আসিতেছিলেন, কয়েক বৎসরের মধ্যেই তাহাদিগকে তিনি মিথ্যা ও অপ্রাকৃত বলিয়া প্রতিপন্ন করিয়াছেন।” র্যাহাদিগকে ভোজন করাইলে শত শত পাপক্ষয় হয়, তাহাদিগের সম্বন্ধে একজন অব্রাহ্মণ রাজার এত বড় আম্পৰ্দ্ধার কথা কি আর সহজে উপেক্ষিত হয়। ব্রাহ্মণের মৌৰ্য-বংশধ্বংসের জন্য বদ্ধপরিকর হইলেন। কিন্তু যতদিন পর্য্যস্ত দোর্দণ্ড প্রতাপ অশোক জীবিত ছিলেন, ততদিন তাহারা বড় উচ্চবাচ্য করিতে সাহসী হইলেন না। কিন্তু তাছার মৃত্যুর পরে যখন হীনবল মৌর্য্য-রাজগণ সিংহাসনের শোভাস্বরূপ বিরাজ করিতে লাগিলেন, তখন তাহার মৌর্য্যরাজের প্রধান সেনাপতি পুষামিত্রকে রাজত্বের লোভ দেখাইয়া রাজার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়া তুলিলেন। পুষ্যমিত্র বৌদ্ধদ্বেষী ও পরম ব্রাহ্মণভক্ত। কৌশলে সিংহাসন হস্তগত করিবার পরামর্শ হইল। গ্ৰীকগণ তখন মধ্যে মধ্যে ভারতের পশ্চিমপ্রান্ত আক্রমণ করিতেছিল। এ একবার তাহাদিগকে পরাজিত করিয়া পুষ্যমিত্র যখন পাটলিপুত্রে ফিরিয়া আসিলেন, তখন মৌর্য্যাধিপ বৃহদ্ৰথ তাহার অভ্যর্থনার্থ নগরের বাহিরে এক বিরাট সৈন্তপ্রদর্শনীর ব্যবস্থা করিলেন। উৎসবের মধ্যে কেমন করিয়া কাহার একটী শর যাইয়া রাজার ললাটে বিদ্ধ হইল। সেই স্থানে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। ব্রাহ্মণ্যধর্মের ভক্তসেবক পুষ্যমিত্র এইরূপে মৌর্য্যবংশের ধ্বংসসাধন করিয়া ভারতের সিংহাসনে উপবেশন করিলেন। ইছার অব্যবহিত পরেই পূৰ্ব্বব্রাহ্মণ্যধর্থের প্রতিক্রিয়া আরম্ভ হইল। যেখান হইতে অহিংসা