পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll 88 ll মোঃ আব্দুর রজ্জাক ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল পাক সৈন্যরা ৬০/৭০ খানা গাড়ীযোগে সারদা আসে। এবং অবশেষে সারদার পতন ঘটে। তারা এসেছে এ খবরে এবং তাদের দেখে সারদা এলাকার লোকজন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা প্রাণের ভয়ে আত্মরক্ষার্থে চরে আশ্রয় নেয়। পাক সৈন্যরা পিটিসিতে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দখল করে এবং বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তারা চরে আশ্রয় নেওয়া লোকদের ধরে একত্রিত করে। তাদের সংখ্যা ছিল অনূ্যন ১০০০/১৫০০। এদের মধ্যে আনসার-মুজাহিদ পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ ছিল। একত্রিত করা লোকগুলিকে জমা করা হলে তারা সারি করে সকলকে গুলি করে হত্যা করে। এক একটা দলকে ধরে এন তারা গুলি করে হত্যা করে। ইতিমধ্যে আর একটি দল জমা হয়। তাদেরকে দিয়ে মৃত লাশ গুলি জমা করে। অতঃপর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। অপর ধৃত লোকগুলি দিয়ে তাদের লাশ জমা করে। শেষাবধি মৃত দেহগুলিকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত তারা এই কাজ করে। অতঃপর তারা সন্ধ্যার মধ্যই এলাকা ত্যাগ করে চলে যায়। এসময় তারা বিরামহীভাবে বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় আমি আর সকলের সাথে চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাপার বেগতিক দেখে চর থেকে পালিয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকি এবং নিজেকে মুক্ত রেখে পাক সৈন্যদের কার্যকলাপ দেখছিলাম। সন্ধ্যার মধ্যেই এখানে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে ছেলে-মেয়েসহ অন্য গ্রামে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেই। পরদিন অত্র থানার নন্দনগাছি নিমপাড়া ইউনিয়নে আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর বুঝতে পারলাম যে সেখানে থাকা নিরাপদ নয়। পাক মেজর এবং শান্তি কমিটির লোকেরা আমাকে খুঁজছে। তাই সেখান থেকে জামনগর গ্রামে যাই। সেখানে থাকা অবস্থায় নন্দন গাছির কতিপয় লোক খবর দেয় যে চেয়ারম্যান আমাকে ডেকেছে, আমার কোন ভয় নেই। তাদের কথামতো নন্দন গাছি পৌছালে তারা আমাকে বন্দী করে এবং পরদিন সকালে জয়েন সরকারের বাড়ীতে বন্দী অবস্থায় হাজির করে। সেদিন ছিল ২৯শে মে। সেখান পোঁছার কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট থেকে হাবিলদার মেজরসহ কতিপয় সামরিক লোক গিয়ে আমাকে বন্দী অবস্থায় ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসে। নিয়ে যাবার সময় পিছনে হাত এবং ন্যাকড়া দিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে আসে। সেখানে মেজর শফি আহমেদের কুঠিতে বন্দী করে রেখে দেয়। বিকেলে মেজর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সে জিজ্ঞেস করেছিল যে তুমি গোপালপুরে কতোজন মিলিটারী মেরেছো এবং কতো রাইফেল নিয়ে গিয়েছিলে? উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হতে না পেরে আমার উপর শারীরিক অত্যাচার শুরু করে। বুটের লাথি, চড়, কিল, ঘুষি মারছিল। এ অবস্থায় অত্যাচার করার পর চোখ আবার বাঁধা হয়। হাত তো আগে থেকেই বাঁধা ছিল। এ অবস্থায় গেষ্ট হাউসের উপর তলায় রাখে। রাত আটার দিকে আবার নতুন করে হাত কষে বাঁধে। পায়ের গিটে বেধ হাঁটুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে ঘাড় এবং হাঁটু পেচিয়ে শক্ত করে বাঁধে। অতঃপর ঐ অবস্থায় আমাকে হৃদয়হীনভাবে প্রহার শুরু করে। হাত, লাঠি, রুলার দ্বারা প্রহার করতে থাকে। রাইফেলের বট দিয়ে গর্দানে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রহার করে। এই