পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৯৮॥
মোসাম্মৎ মনোয়রা খাতুন
গ্রাম- সলঙ্গ মধ্যপাড়া ভরমহনী
থানা রায়গঞ্জ
জেলা পাবনা

 ১৯৭১ সালের ভাদ্রমাসের (১৫ তারিখ) মুসলীম লীগের অন্যতম দালাল দূরবর্তী তারাশ থানার ক্যাম্প থেকে একদল পাকিস্তনী খান সেনাদের সলঙ্গা বাজারে ক্যাম্প অপারেশন করার জন্য গোপন চারদিকে ছড়িয়ে ছিল। ঠিক ঐ তারিখেই আরও ২০/২৫ জন খান কুকুরেরা লাহড়ী মোহনপুর থেকে স্পীড বোট যোগে সলঙ্গা বাজারের দিকে চলে আসে। সলঙ্গা বাজারে এসে তারা বাজারের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে। কোন রকম দুষকৃতকারীকে না পেয়ে তারা আপন ক্যাম্পের দিকে রওয়ানা হয়। যাওয়ার পথে পাক সৈন্য আমাদের বাড়ীতে ঢুকেই আমাকে ও আমার শাশুড়ীকে দেখতে পায়। ইতিপূর্বেই আমার স্বামী জীবনের ভয়ে বাড়ী থেকে সরে পড়ে। ফাখ সৈন্য আমার শাশুড়ীকে উর্দুতে বলে যে, “ইয়ে বুড়ীমা, তোম জলদী হেঁয়াছে ভাগ যাও।” বুড়ী জীবনের ভয়ে বাড়ীর বাইরে চলে যায়। আমি তখন পাক ফৌজের হাতের তল দিয়ে দৌড়ে পাশের বাড়ীতে আশ্রয় নেই। পাক ফৌজ তখন দৌড় দিয়ে সেই বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। আমি তখন উক্ত বাড়ীওয়ালার যুবতী মেয়েকে জড়িয়ে ধরি।পাক ফৌজ তখন উক্ত যুবতী মেয়েকে যুবতী মেয়েকে না ধরে আমাকে জোর করে তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। আমি তখন বলি যে বাবা তুমি আমার মান হানি কোরোনা, তোমার পায়ে ধরি মিনতি করি। তখন পাক ফৌজ উর্দুতে বলে যে, তুমি আমাকে বাবা বোলোনা, আমি তোমার ভাই আর তুমি আমার মায়ের পেটের বোন।এই কথা কয়টি বলে আমার হাত ধরে জোর করে পরবর্তী বাড়ী হারু কবিরাজ পাকের ঘরে ঢুকে পড়ে। তৎপর আমার উপর পাশবিক অত্যাচার আরম্ভ করে। আমার শরীরের উপর অমানুষিক উপায়ে ধর্ষণ ও মর্দন করতে আরম্ভ করে দেয়। আমি তখন অচৈতন্য অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকি। খান পিশাচ তার বাসনা তৃপ্তি করে অপরাপর খান সেনাদের তাদের কাম বাসনা চরিতার্থ করার জন্য হুকুম দেয়। এই সংবাদ শুনে খান কুকুরদের আর ও চারজন আমার কাছে এসে পড়ে। আমাকে তারা আরও বলে যে,তোমার স্বামী কোথায়, সে নাকি মুক্তি ফৌজ, সে নাকি লুট করেছে? অবশ্য সব কথা উর্দুতে জিজ্ঞাসা করে।

 তখন আমি বলি যে, না না, সব মিথ্যা, বাবা আমার স্বামী ওসব কিছুই করে নাই বা সে কোন মুক্তি ফৌজ নয়। তখণখান দস্যুরা আমার ঘরে ঢুকে তল্লাশী চালায়। ঘরে ঢুকে কোন রকম লুটের মালপত্র তারা দেখতে পায় না। তারা শুধু তামাক ও তামাকের তৈরীর মসলাদি দেখতে পায়। কারণ আমার স্বমী একজন দরিদ্র তামাক ব্যবসায়ী। খান সেনারা আমাকে জানায় যে, তুমি এখানে থাক, আমরা বাইরে থেকে এখনি আসছি। তাদের কুমতলব বুঝতে পেরে আমি দূরে একটা বাড়ীর দিকে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই যে আরও একদল খানসেনা একটি হিন্দু মেয়েকে জোর করে টানাটানি করছে তাদের কামবাসনা মিটানোর জন্য। ঐ দেখে আমি আরও দূরের বাড়ীতে আশ্রয় নেই। এর পরপরই তারা বাজার ছেড়ে ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়।

টিপসহি /মনোয়ারা খাতুন