পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ど8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গুলীবর্ষণ সকালের দিকে কোন অঞ্চলে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। সৈন্যরা তোপখানা রোডের উপর একজন মধ্য ব্যক্তিকে বললাম: এখানে গুলি আসবে, আপনারা সরে যান। প্রশ্ন করলেন তিনি: আপনি কি করবেন? তিন-চারজন যুবক দেয়ালের পাশের গাছটায় উঠে আমাকে টেনে দেয়ালের ওপারে নিয়ে গেল । নীচেই সরকারী মসজিদ। সেক্রেটারিয়েটের ভেতরের পরিবেশটা অন্য-প্রত্যেকটি মানুষ আক্রমণের আশঙ্কায় সময় গুনছেন। প্রায় ত্রিশ-চল্লিশজন লোককে দেখলাম সাদা পোশাকে নির্বাক ঘুরে বেড়াচ্ছে। আকস্মিকভাবে এক তরুণ এসে জিজ্ঞেস করল রাতে কোথায় ছিলেন, কোথায় গুলী লেগেছে, শরীরের সর্বত্রই রক্ত কেন? কাপড় বদলানো দরকার। তার অনেক প্রশ্ন। শান্তি তার নাম। মোতালেব কন্ট্রাক্টারের মিস্ত্রী। এখানেই কাজ করে থাকে। তারপর এলো আরো কয়েকজন-সেই সাদা পোশাকের লোকগুলো। একজন আমার পরিচয় জানতে চইলেন। বললাম: আমি কুমিল্লায় ব্যবসা করি-রাতে লঞ্চ থেকে নেমে বড় ভাই-এর বাড়ী যাচ্ছিলাম। এ সমস্ত কিছুই জানতাম না। রাতের বেলা তোপখানা রোডে গুলী খেয়েছি। নিজেকে সাংবাদিক বলতে চাইনি বলে সবটাই মিথ্যে বললাম তাদের কাছে। এখানে আক্রমণ হলে আপনার পক্ষে বাঁচা সম্ভব হবে না, চলুন ঐ ন’তলায়। একজন প্রস্তাব করলেন। শান্তি ছেলেটা তক্ষুণি একটা লুঙ্গি নিয়ে এলো ওর ঘর থেকে। আমাকে দু’জনে ধরে দু’নম্বর নতলায় নিয়ে গেল। পয়লা মার্চ থেকে দেশে অসহযোগ চলেছে-অফিস-আদালত বন্ধ। সে কারণে লিফট নেই। পাচতলায় গিয়ে পৌঁছলাম। কোন কক্ষই খোলা নেই। কৃষি বিভাগের একটা বাথরুম পাওয়া গেল খোলা। তখন রক্ত ঝরছিল ক্ষত দিয়ে। এই বাথরুমেই ২৬শে মার্চ ও পরবর্তী রাত কাটাতে হয়। বাইরে মৃত্যুর বিভীষিকা। সকলেই পোশাক খুলে রেখে সাদা পোশাকে সেক্রেটারিয়েট পাহারা দিচ্ছেন। প্রত্যেক্যের কাছে মাত্র কুড়ি রাউণ্ড বুলেট ছিল। তারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন যে, রাজারবাগ ও পিলখানায় বিদ্রোহ হয়েছে। যুদ্ধ হয়েছে বর্বর বাহিনীর সাথে। বাঙ্গালী পুলিশ ও সেনাদের দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লড়াই না করে তারা কেউ মৃত্যুকে স্বীকার করতে চান না। সাততলার উপর তাদের ঘাঁটি তৈরী করা হয়েছিল। বিদেশী সৈন্যরা সেক্রেটারিয়েটে প্রবেশ করলে এই ঘাঁটি থেকে আক্রমণ করার সমস্ত প্রস্তুতি তাদের ছিল। সেকেণ্ড গেটের ভেতর দিকে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে তারা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সাতাশ তারিখে দশটার দিকে একজন এসে বললেন, এখন গোলাগুলি বন্ধ। লোকজন রাস্তায় বেরিয়েছে। কারফিউ উঠিয়ে নিয়েছে বলে ঘোষণা করা হচ্ছে।