পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪০

২৩ বছর পর এই তত্ত্ব যে ভুল সেটা প্রমাণিত হয়ে গছে। আজ আমরা যদি হিন্দু-মুসলমান আলাদাভাবে চিন্তা করি তাহলে গণতন্ত্রের বিশ্বাসী কোন লোক তা মেনে নিতে পারে না। অনেক মুসলমান যাঁরা ভাবছেন যে, বোধ হয় পাকিস্তান এই কথাটা উড়ে যাবে এই সন্দেহ তিনি প্রকাশ করেছেন, কিন্তু জানি না কেউ এই মনোভাব পোষণ করেন কিনা। আমি সেদিন এক বক্তিতায় এই দ্বিজাতিতত্ত্বের কথা বলেছিলাম। আমাদের প্রফেটের জীবনী যদি আলোচনা করি তাহলে দেখি যে, প্রফেট যখন মক্কা থেকে মদিনায় গিয়েছিলেন তখন সেখানে অনেক ইহদি, খৃষ্টান বাস করত। অর্থাৎ সেখানে অনেক নন-মুসলিম বাস করত। মক্কাবাসিরা মদিনা আক্রমণ করার ষড়যন্ত্র করে এবং তখন মদিনায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোক বাস করত। তিনি তখন সেখানকার অধিবাসিদের বলেন, আমরা এক জাতি-ওয়ান নেশন-এবং আজ যদি কেউ মদিনা আক্রমণ করে তাহলে আমরা মুসলমান, ইহুদি, খৃষ্টান ইত্যাদি সকলে সমবেতভাবে বাধা দেবার চেষ্টা করব।

 সুতরাং আমি বলতে চাই, যে তথ্যের ভিত্তিতে এটা হয়েছিল সেটা ভুল। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না কারণ আমরাও তার শরিক ছিলাম, আমরাও তা স্বীকার করে নিয়েছিলাম, আজকে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাই সেই দিক থেকে বলছি যে, আজকে বাংলাদেশ সম্বন্ধে- যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অর্থাৎ এটা বলা হয়েছে যে, বাংলায় প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে যে কর্মসূচীর ভিত্তি মুজিবুর রহমান সাহেব করেছিলেন সেই নির্বাচনের রায়কে আজকে ইয়াহিয়াশাহী, জঙ্গীশাহী, মানেননি, আজকে না মানার ফলেই এই অবস্থা হয়েছে আজকে আমি বলব ইসলামিক রাষ্ট্রের নাম নিয়ে ইয়াহিয়া সাহেব সেভাবে সেখানকার অধিবাসীকে, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে হত্যা করেছেন এবং যেভাবে নারীর উপর পাশবিক অত্যাচার করছে, আজকে সেগুলি আমার মতে ইসলামবিরোধী কাজ ছাড়া আর কিছু বলা যেতে পারে না। আজকে ইসলামের নাম নিয়ে যারা এই জিনিসকে সমর্থন করে তারে আমি বলব তারা ইসলামের মূল কথা জানে না এবং তা বিশ্বাসও করে না। তারা একটা গোঁড়ামির বশে, তারা একটা সেণ্টিমেণ্টের বশে কিম্বা না বুঝে এই সব জিনিস করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকে এই বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে বাঙ্গালী অবাঙ্গালী কথাটা এসে পড়েছে। বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী এই কথাটা আসবার ফলে আজকে কলকাতায় কিংবা বাংলাদেশের বুকে যারা অবাঙ্গালী মুসলমান কিংবা অবাঙ্গালী হিন্দু পর্যন্ত তাদের মধ্যে একটা সন্দেহ দেখা দিয়েছে পরস্পর পরস্পরকে যেন একটা সন্দেহ করছে। এই জিনিসটা আমার মনে হয় দেশের পক্ষে অমঙ্গল। দেশের পক্ষে অমঙ্গল এইজন্য বলছি আজকে সেখানকার লড়াই বাঙ্গাল-অবাঙ্গালী বলে নয়, আজকে জঙ্গীশাহী ইয়াহিয়া খান কিংবা পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকর্তা যারা তারা বাংলাদেশের লোককে সমস্ত রকম জিনিস থেকে বঞ্চিত করে শাসন করতে চেয়েছিল। আজকে বৃটিশ আমলে গোটা ভারতবর্ষে যেভাবে শোষণ চালাতে হয়েছিল আজকে সেইভাবে শোষণ করার পরিকল্পনা তারা নিয়েছিল। আজকে তারা এই দেশের অর্থ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধশালী করতে চেষ্টা করেছিল তাই সেখানে তারা তাদের একটা অধিকার দাবি করেছিল, তারা যে জিনিস চেয়েছিল তারা একটা স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিল। আজকে যেখানে শতকরা ৯৯ জনের প্রতিনিধিত্ব পাওয়া সত্ত্বেও সেই দলকে ইয়াহিয়া খান তাদের সুযোগ দেননি তাদের অস্ত্রের বলে। আমি তাই আজকে যে নরহত্যা চলছে সেটা খুবই দঃখের কথা, এর সঙ্গে আমি বলব, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কথা, আজকে সহজেই দেখতে পাচ্ছি এই যে নরহত্যা, গণহত্যা চলছে, সংগ্রামী মানুষকে যে এইভাবে পিষে মারছে, আজকে তাদের পিছনে অনেকের সহানুভূতি আসাছে, কিন্তু কেউই এগিয়ে আসছে না। আমি বলব ভারতবর্ষ তবুও এগিয়ে এসেছে, এগিয়ে এসে সেই দুঃস্থ লোকদের সাহায্য করছে। কিন্তু আজকে ভারতবর্ষের যে বাধা সেই বাধার একমাত্র বাধা হচ্ছে চীন। আজকে এই সংগ্রামকে, জঙ্গীশাহী শাসক ইয়াহিয়াকে যদি কেউ সমর্থন করে থাকে, আজকে আমার মনে হয় বিদেশী দেশের মধ্যে চীন দেশই তাকে সমর্থন করে। এটা খবুই দুঃখের কথা, যারা সংগ্রামী মানুষের পিছনে যে দেশ বলে আমরা আছি, যারা সংগ্রামী মানুষের জন্য কুম্ভীরাশ্রু, ফেলে, তারা সেই চীন দেশের বলে বলীয়ান হয়ে আজকে ইয়াহিয়া খান এবং তার জঙ্গীশাহী এদের দমন পীড়ন করতে আরম্ভ করেছে এটা বড়ই দুঃখের বিষয়। আশ্চর্যের বিষয় আজকে যিনি আমাদের বিরোধী নেতা, সেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, গণতন্ত্র সম্বন্ধে তিনি অনেক উপদেশ আমাদের দিয়েছেন, কাকে বলে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র কিভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এইসব বলেন কিন্তু