পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৪

অতুলনীয় লড়াই করছে সেই জায়গায় সেই স্বাধীনতাকামী মানুষের সমর্থনে এগিয়ে না এসে দক্ষিণ ভিয়েতনামে যে মার্কিন পদলেহী সরকার আছে তার কাছে মোটর, ট্রাক ও আরও নানারকম সামরিক উপকরণ বিক্রয় করতে অনুমতি সেই সরকারই দিয়েছেন। এমনটা কেন হয়? হয় এই কারণে যে, ফরেন পলিসি ইজ আফটার অল দি প্রজেকশন অফ দি হোম পলিসি। যদি আভ্যন্তরীণ নীতি প্রতিক্রিয়াশীল হয় তাহলে বৈদেশিক নীতিতে তা প্রতিফলিত হবেই। পুঁজিবাদকে শক্ত করাই যেখানে আভ্যন্তরীণ নীতি সেখানে বৈদেশিক নীতি প্রগতিশীল হয় না। তাই ভারত সরকারের এই ভাব। ভারত সরকার যে সাহায্যের কথা মুখে বলছেন এর মধ্যে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য এবং এক বিশেষ শ্রেণীর দৃষ্টি ও স্বার্থ নিহিত আছে, যে শ্রেণী শাসক ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণী। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই। আর উদ্দেশ্য হল, মৌখিক দরদ দেখিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করা। সে যাই হোক, আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশের আন্দোলনের গোড়ায় স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল না। প্রথমে মুজিব নেতৃত্বে চেয়েছিলেন প্রভিন্সিয়াল অটনমি উইদিন পাকিস্তান-পাকিস্তানের মধ্যেই পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। যখন সে দাবী স্বীকৃত হল না, তখন এই দাবী পাকিস্তানের শাসক সামরিক চক্র মানল না বাধ্য হয়েই বাংলাদেশের মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করল এবং সেই শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনও বিশ্বের ইতিহসে এক নজির সৃষ্টি করেছে। গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু সে আন্দোলনও এত বিরাট ব্যাপক রূপ নেয়নি। মোট জনসংখ্যার তুলনায় সামান্য লোকই তাতে অংশগ্রহণ করেছিল; সর্বস্তরের মানুষও তাতে যোগ দেয়নি। আর বাংলাদেশে দেখলাম সমস্ত স্তরের সাধারণ মানুষ শুধু নয়, সেখানকার পুলিশ, সেখানকার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, সেখানকার আমলাতন্ত্র এমন কি সেখানকার হাইকোর্টের জজরা পর্যন্ত এই অসহযোগ আন্দোলনে নেমে গেল, গোটা জাতি এই আন্দোলনে নেমে গেল। সেই আন্দোলনে তুলনায় ভারতবর্ষে গান্ধীজীর নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন নিঃসন্দেহ ম্লান। এমন অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীর আর কোথায়ও হয়নি। তারপর তাতেও যখন হল না তখন বাংলাদেশেল স্বাধীনতাকামী মানুষ বাধ্য হলেন সশস্ত্র সংগ্রামের পথে নামতে যখন পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী তাদের উপর আক্রমণ শুরু করল, যুদ্ধ তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল। যুদ্ধ মাত্রই খারাপ নয়। যাঁরা প্যাসিফিস্ট বুর্জোইন ইলিউশন-এ ভোগেন তাঁরা যুদ্ধ মাত্রকেই ঘৃণা করেন। কিন্তু যুদ্ধ মাত্রই খারাপ নয়, এ ওয়ান মে বি আনজাস্ট ওয়ার অফ অ্যাগ্রেশন, অর এ জাস্ট ওয়ার ফর ন্যাশনাল ইণ্ডিপেণ্ডেস, এ জাস্ট ওয়ার ফর ইম্যানসিপেশন অফ পিপল ফ্রম অল সর্টস অফ এক্সপ্লয়টেশন অফ ম্যান বাই ম্যান।

 ঘৃণা করতে হবে অন্যায় যুদ্ধকে, বিরোধিতা করতে হবে অন্যায় যুদ্ধকে, সমর্থন করতে হবে ন্যায় যুদ্ধকে। বাংলাদেশের মানুষ যে সংগ্রাম করছে, আমাদের এই প্রস্তাবে আমরা রেখেছি তা জাস্ট ওয়ার ফর ন্যাশনাল ইণ্ডিপেণ্ডেন্স। জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ন্যায় যুদ্ধ। একে সমর্থন করতেই হবে আমাদের পশ্চিম বাংলার মানুষকে, পৃথিবীর সমস্ত স্বাধীনতাকামী শান্তি আসতে পারে এই যুদ্ধবাজদের হীন চক্রান্তকে পরাস্ত করে।

 পাকিস্তানী সামরিক চক্র বাংলাদেশে যে কাজ সেটা যুদ্ধ নয়, গণহত্যা- জিনোসাইড। আন্তর্জাতিক আইনেও যা অপরাধ। কিন্তু এ থেকে এ কথাটা যেন না আসে যে, পাঞ্জাবীদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীরা লড়ছে বা বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবীরা লড়াছে। লড়ছে স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক মানুস ফ্যাসিস্ট সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে। এখানে ধর্ম, বর্ণ উপজাতি প্রভৃতির প্রশ্ন আসে। তাই মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আমার বক্তব্য পরিস্কার। যে প্রস্তাব আমরা রেখেছি সেটা যেন কাগুজে প্রস্তাবে না হয়। আর কাগুজে প্রস্তাবে যদি আমরা না করতেই চাই আমি আশা করব কংগ্রেস দলের সদস্যরাও আমাদের বিরোধী পক্ষের সদস্যদের সঙ্গে মিলে ভারত সরকারের উপর চাপ দেবেন। আমি মনে করি ভারত সরকার আজ পর্যন্ত মৌখিক সহানুভূতি ছাড়া বিশেষ কিছুই করেন নি। নৈতিক সমর্থন নিশ্চয় করতে হবে, কিন্তু তার দিন দীর্ঘদিন গত হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্ত্র দিলে মেটিরিয়াল হেল্প বাস্তব কার্যকারী সাহায্য দেওয়া দরকার। এ লড়াই তাড়াতাড়ি