পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩০৭
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের সমর্থনে সারা পশ্চিম বংগে হরতাল পালিত দৈনিক ‘যুগান্তর’ ১ এপ্রিল, ১৯৭১

ওপারে লড়াই এপারের সমর্থন

সারা পশ্চিমবঙ্গ হরতালে সামিল

(স্টাফ রিপোর্টার)

 কলকাতা ৩১ মার্চ-বাংলাদেশের মানুষের বীরত্বব্যাঞ্জক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, সহানুভূতি এবং একাত্মতা জানিয়ে পশ্চিম বাঙ্গলার মানুষ আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ ধর্মঘট ও হরতাল পালন করেছেন। জীবন-মরণ যুদ্ধে লিপ্ত ও বাঙ্গলার আট কোটি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এ বাঙ্গলার পাঁচ কোটি বাঙ্গালী। তাঁদের ব্যথায় ব্যথিত, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার ভাগীদার।

 বাঙ্গলা বিভক্ত হবার পর এই প্রথম এ-বাঙ্গালার বাঙ্গালীর প্রতি প্রকাশ্যে এবং সোচ্চারে সহানুভূতি ও সমর্থন জানালেন।

 দোকান-পাট, বাজার-হাট, কল-কারখানা বন্ধ রেখে, যানবাহন তুলে রেখে, সমস্ত আনন্দানুষ্ঠান বাতিল করে দিয়ে এ বাঙ্গলার বাঙ্গালী তাঁর একান্ত আপনজন ও বাঙ্গালার বাঙ্গালী বীর শহীদের প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধার নিদর্শনরূপে আজ ‘শোকদিবস’ পালন করে বর্বরতার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।

 পরম আত্মীয়ের বিয়োগ ব্যথায় মহানগরীর সর্বত্র আজ কালো পতাকা। পথের মোড়ে মোড়ে শহীদ বেদী। শ্বেতশুভ্র শহীদ বেদীগুলি ধূপধূনা আর ফুলে ফুলে সাজান।

 শহীদ বেদীর পাশে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা। আর কালো পতাকা। নাগরিকদের বুকে কালো ব্যাজ। এই ‘কালিমা’ একাধারে প্রতিবাদ অন্যদিকে ধিক্কার। স্বাধিকার আন্দোলনে নিহত সৈনিকদের জন্য শোকের ছায়া সর্বত্র পরিব্যপ্ত।

 বাঙ্গালীর বাঁচার দাবীর সমর্থনে এই শহরে সকালে এবং বিকালে অনেকগুলি প্রতিবাদ মিছিলও বের হয়। মিছিলের আওয়াজ বাঙ্গালীর জয়ধ্বনি। উদ্যোক্তা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কতকগুলি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহরের নানান এলাকায় অর্থ সংগ্রহ অভিযানও শুরু হয়েছে। অর্থ সংগ্রহ অভিযানে মহিলারাও এগিয়ে আসেন।

 বিনা হাঙ্গামায় এমন সর্বাত্মক ধর্মঘট কলকাতা ইতিপূর্বে খুব কমই প্রত্যক্ষ করেছে। দোকান-পাট বন্ধের জন্য এদিন কাউকে শাসাতে হয়নি। কিম্বা মিছিল নিয়ে গিয়ে বোমাও নিক্ষেপ করতে হয়নি। রেল লাইন অবরোধ করার আগেই ট্রেন বন্ধ। লোক্যাল ট্রেন ‘ত চলেইনি, দূর পাল্লার ট্রেনগুলি পর্যন্ত আজ এ রাজ্যে ঢোকেনি। হাওড়া-শিয়ালদা খাঁ খাঁ করছে। স্ট্যাণ্ডে রিকশা আছে-কিন্তু চালক নেই।

 বন্দরেও একই দৃশ্য। দেশের অর্থনেতিক কাঠামো যে কর্মবহুল বন্দর বাঁচিয়ে রাখছে সেই কোলাহলমুখর কলকাতা বন্দরেও আজ কোন সাড়াশব্দ নেই। সারি সারি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে, কোন কাজ হয়নি। শ্রমিকরা কাজ করেনি।