পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

তাঁহার প্রভুর ধনসম্পত্তি কোথায় লুক্কায়িত আছে, তাহার সন্ধান লইবার চেষ্টা করেন; কিন্তু রাজবল্লভ অবিচলিত ভাবে সমস্ত নির্য্যাতন সহ্য করিয়াও প্রভু-পত্নীর পক্ষে অনিষ্টকর একটী কথাও প্রকাশ করেন নাই। এইরূপে কিছুদিন নজরবন্দী থাকিবার পর, ঘসিটি তাঁহার পিতামাতাকে উপরোধ করিয়া, রাজবল্লভকে মুক্ত করিয়া দেন; কিন্তু রাজবল্লভের মনে সিরাজভীতি জাগিয়া রহিল। সিরাজ নবাব হইলে তাঁহাকে কখনও মার্জ্জনা করিবেন না, এই আশঙ্কায় রাজবল্লভ ঘসিটি বেগমের সহিত সম্মিলিত হইয়া, সিরাজের উচ্ছেদ সাধনের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন।

 নবাবের মৃত্যু আসন্ন ও তাঁহার নিজের পরিবারবর্গ ও বিষয়সম্পত্তি সংরক্ষণ সহজ নহে বুঝিতে পারিয়া, রাজবল্লভ সর্ব্ব প্রথমেই তৎসমুদয় কোন নিরাপদ স্থানে রাখিতে যত্নবান হইলেন। তদনুসারে তিনি ইংরাজদিগের কাশিমবাজারস্থ প্রধান কর্ম্মচারী ওয়াট্‌স্ সাহেবকে এই মর্ম্মে একখানি পত্র লিখিলেন যে, তাঁর পরিবারবর্গ ঢাকা হইতে জগন্নাথদেব দর্শন-মানসে পুরী যাইতেছেন, পথিমধ্যে কলিকাতায় কিছুদিন অপেক্ষা করিবেন। অতএব যখন তাঁহারা কলিকাতায় উপস্থিত হইবেন, তখন তাঁহাদের উপযুক্তরূপ অভ্যর্থনা বা সমাদরের যেন বিন্দুমাত্র ত্রুটি না ঘটে।

 রাজা রাজবল্লভের বাসস্থান ঢাকা নগরীতে। সেখানে তিনি একজন গণ্যমান্য প্রতিপত্তিশালী লোক ছিলেন। ব্যবসায় সুত্রে ঢাকার সহিত ইংরাজদের সংস্রব ছিল। রাজবল্লভের তুষ্টিসাধন করিতে পারিলে, তাঁহাদের ব্যবসার বিশেষ সুবিধা হইতে পারে। অধিকন্তু সিরাজ তাঁহাদের শত্রু, সেই সিরাজ যাহাতে মসনদ না পান, সে জন্য ঘসিটি বেগম চেষ্টা করিতেছেন, সেই চেষ্টা ফলবতী হইবার ও কতকটা সম্ভাবনা

৫২