পাতা:বিচিত্রা (প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R হয়েছিল ষ্টেশনে যখন সে দেখেছিল বিপ্ৰদাসকে। যেন মহাভারত থেকে ভীষ্ম নেমে এলেন। বীরের মতো তেজস্বী মুণ্ঠি, তাপসের মতো শান্ত মুখশ্ৰী, তার সঙ্গে একটি বিষাদের নম্রতা'। মোতির মার মনে হয়েছিল। কেউ যদি কিছু না বলে তবে একবার ওর পা দুটাে চুয়ে আসি। সেই রূপ আজো সে ভুলতে পারেনি। তার পরে যখন কুমুকে দেখল্লেী, মনে মনে বললে, দাদারই বোন বটে। এক রকম জাতিভেদ আছে যা সমাজের নয়, যা রক্তের, - সে জাত কিছুতে ভাঙা যায় না । এই যে রক্তগত জাতের অসামঞ্জস্য এতে মেয়েকে যেমন মন্মান্তিক ক’রে মারে পুরুষকে এমন নয়। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল ব’লে মোতির মা এই রহস্য নিজের মধ্যে বোঝবার সময় পায়নি,-কিন্তু কুমুর ভিতর দিয়ে এই কথাটা সে নিশ্চিত ক’রে অনুভব করলে। তার গা-কেমন করতে লাগল। ও যেন একটা বিভীষিকার ছবি দেখতে পেলে,-যেখানে একটা অজানা জন্তু লালায়িত রসনা মেলে গুড়ি মেরে বসে আছে, সেই অন্ধকার গুহার মুখে কুমুদিনী দাড়িয়ে দেবতাকে ডাকচে । মোতির মা রেগে উঠে। মনে মনে বললে, “দেবতার মুখে ছাই ! যে দেবতা ওর বিপদ ঘটিয়েচে সেই নাকি “ওকে উদ্ধার করবে। তায় রে!” Հ8 পরের দিন সকালেই কুমু দাদার কাছ থেকে টেলিগ্রাম পেয়েছে, “ভগবান তোমাকে আশীৰ্ব্বাদ করুন।” সেই টেলিগ্রামের কাগজখানি জামার মধ্যে বুকের, কাছে রেখে দিলে। এই টেলিগ্রামে যেন দাদার দক্ষিণ হাতের স্পশ । কিন্তু দাদা নিজের শরীরের কথা কেন কিছুই লিখলে না ? তবে কি অসুখ বেড়েচে ? দাদার সব খবরই মুহূৰ্ত্তে মুহূৰ্ত্তে যার প্রতক্ষগোচর ছিলো, আজ তার কাছে সবই অবরুদ্ধ। আজ ফুলশযে, বাড়ীতে লোকে লোকারণা। আত্মীয় মেয়েরা সমস্তদিন কুমুকে নিয়ে নাড়াচাড়া কবৃচে । কিছুতে তাকে একলা থাকতে দিলে না। আজ একলা থাকবার বড়ো দরকার ছিল। শোবার ঘরের পাশেই ওর নাবার ঘর ; সেখানে জলের কল পাতা, এবং ধারা মানের ঝাঝরি বসানো । কোনো [ পৌষ অবকাশে বাক্সো থেকে যুগল রূপের ফ্রেমে বাধানো পটখানি বের করে স্নানের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করুল। শাদা পাথরের জলচৌকির উপর পট রেখে সামনে মাটিতে বসে নিজের মনে বারবার ক’রে বললে, “আমি তোমার, আজ তুমিই আমাকে নাও। সে আর কেউ নয়, সে তুমিই, সে তুমিই, সে তুমিষ্ট। তোমারি যুগল রূপ প্ৰকাশ হোক আমার জীবনে ৷” ডাক্তাররা বলচে বিপ্ৰদাসের ইনফ্লুয়েঞ্জা নুমোনিয়ায় এসে দাড়িয়েচে । নবগোপাল একলা কলকাতায় এলো ফুলশয্যার সওগাদ পাঠাবার ব্যবস্থা করতে। খুব ঘটা ক’রেই সওগাদ পাঠানো হোলো। বিপ্ৰদাস নিজে থাকলে এত আড়ম্বর করুত না । কুমুর বিবাহ উপলক্ষো ওর বড়ো বোন চারজনকেই আনতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু খবর রটে গেছেঘোষালরা সদরাহ্মণ নয়। বাড়ির লোক এ বিয়েতে কিছুতে তাদের পাঠাতে রাজি হোলো না। কুমুর তৃতীয় বোন যদি বা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁট ক’রে বিয়ের পরদিন কলকাতায় এসে পৌছল, নবগোপাল বললে, “ওবাড়ীতে তুমি গেলে আমাদের মান থাকবে না।” বিবাহ রাত্রির কথা আজো সে ভুলতে পারেনি। তাই প্ৰায় অসম্পৰ্কীয় গুটিকয়েক ছোটো ছোটো মেয়ে এক বুড়ি দাসীর সঙ্গে পাঠিয়ে দিলে নিমন্ত্রণ রাখতে। কুমু বুঝলে, সন্ধি এখনো হ’ল না, হয়তো কোনো কালে হবে না । কুমুর সাজসজ্জা হোলো। ঠাট্টার সম্পৰ্কীয়দের ঠাট্টার পালা DBuB DDBuJSDDDuBuB gDBDD D BBS BDDBD আগে থাকতেই ব’লে রেখেছিল, বেশি রাত কবুলে চলবে না, কাল ওর কাজ আছে। নটা বাজবামাত্রই হুকুম মতো নীচের উঠোন থেকে সশব্দে ঘণ্টা বেজে উঠল। আর এক মুহুৰ্ত্ত না। সময় অতিক্রম করুবার সাধ্য কারো নেই। সভা ভঙ্গ হোলো । আকাশ থেকে বাজপাখীর ছায়া দেখতে পেয়ে কপোতীর যেমন করে, কুমুৱা বুকটা তেমনি কঁাপিতে লাগল। তার ঠাণ্ডা হাত ঘামাচে, তার মুখ বিবর্ণ। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই মোতির মার হাত ধ’রে বললে, “আমাকে একটুখানির জন্যে কোথাও নিয়ে যাও আড়ালে। দশ মিনিটের জন্তে