পাতা:বিচিত্রা (প্রথম বর্ষ প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

বর্ণমালাতত্ত পরলােকগত সুকুমার রায় পরললাগত সুকুমার রায়ের পরিচয় বিচিত্রা" পাঠকদিগের নিকট দিবার বিশেষ প্রয়ােজন নাই বােধ হয়। তাঁহার পিতা স্বর্গীয় উপেন্দ্রকিশাের রায়চৌধুরী-মহাশয়ের স্থায় তিনিও বাংলা-সাহিত্য-জগতে সুপরিচিত। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া সুকুমার বাংলা শিশুসাহিত্যকে “বােল-তাবােল” ও “হঅল" নামে যে দুইখানি অত্যুৎকই পুস্তক উপহার দিয়া গিয়াছে, তাহাই তাহাকে স্বরণীয় করিয়া রাখিবে। “আবােল-তাবােল শুধু শিশু-সাহিত্যে নয়, কবিত্বসম্পদে, কল্পনার বৈচিত্রে, ছন্দের লালিত্যে, হাস্যরসের অভিনয়ে বাংলা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিবার দাবী রাখে। অপূর্ব হাসির গল্প -য-ব-র-ল” সঙ্গেও একথা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, তাহা যে-কোনো দেশের শিশু-সাহিত্যে গৌরবের বস্তু বলিয়া বিবেচিত হইবে। এই সব রচনায় ও শিশুপাঠা “সন্দেশ” সম্পাদনে সুকুমার সে-শক্তির পরিচয় দিয়াছিলেন, সেশক্তি সেইখানেই আপনার পরিচয় সীমাবদ্ধ করিয়া রাখে নাই, নানা দিকে, নানা ভাবে তাহা আপনাকে প্রকাশ করিয়া গিয়াছে। তাহার “দৈবেন দেয়ম,”, “ক্যাবলের পত্র”, “ভাষার অত্যাচার প্রতি যে-সমুদয় প্রবন্ধ মাসিকপত্রিকার পৃষ্ঠায় ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত হইয়া রহিয়াছে, যদি কোনাে দিন তাহা সংগৃহীত হইয়া পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়, তবে পাণ্ডিত্য, চিন্তাশীল ও সহজ সুন্দর লিখন-ভঙ্গীর একত্র সমাবেশ কত হৃদয়গ্রাহী হইতে পারে তাহার পরিচয় পাওয়া যাইবে। অনাবিল হাস্যরসরচনায় তিনি যে কতদূর সিদ্ধিলাভ করিতে পারিয়াছিলেন, তাহার সাক্ষ্য রহিয়াছে কয়েক বৎসর পূর্বে প্রবাসী"তে প্রকাশিত “ভাবুকসভা" নামধেয় ক্ষুদ্র কৌতুকনাট্যখানিতে ও তাহার অপ্রকাশিত “চলচিত্তচঞ্চয়ী" ও গল্পক্রম" নাটিকায়ে। এই দুইখানি নাটিকাই আমরা বিচিত্রার পাঠকদিগকে উপহার দিবার ইচ্ছা রাখি। সুকুমারের অকালমৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের যে ক্ষতি হইয়াছে তাহা সহজে পূরণ হইবার নহে। | মৃত্যুর অকাল পূর্বে তিনি “বর্ণমালা" লেখা আরম্ভ করেন। কিন্তু নিতান্ত পরিতাপের বিষয় তাঁহার এ-রচনা তিনি শেষ করিয়া যাইতে পারেন নাই। যদি পারিতেন, তবে ইহা যে একটি অপুর্ব বহু হইত, তা এই অসমাপ্ত রচনা হইতেই বেশ বুঝিতে পারা যায়। লেখাটি অসম্পূর্ণ বটে, কিন্তু ‘কাঠামটি থাকায় অসংলগ্ন অংশগুলি খাপছাড়া মনে হয় না;-সেজন্য মধ্যে মধ্যে দু'একটি বর্ণ বাদ থাকা সত্বেও রচনার অংশগুলি সবই দেওয়া হইল। ইহা বর্ণমালা সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণামুলক রচনা নহে; বিশ্বছন্দের একটি ছন্দের मांग बाज “শুন শুন শুন নুতন, কে যেন স্বপন দিলা, ভাব-এনে ৰে-ব্যঞ্জনে ছন্দ করেন লীলা!” -“বিচিত্রা"সম্পাদক পড়’ বিজ্ঞান, হবে দিন, ঘুচিবে পথের ধাধা, দেখিবে গুণিয়া, এ দ্বী দুনিয়া, নিয়ম নিগড়ে বাঁধা। কহে পণ্ডিতে, অড়-সন্ধিতে, যপিও-ফাকে, অনু-অৰকাশে, রন্ধে-রলে, আকাশ লুকারে থাকে। হেথা হােথা সেথা জড়ের পিণ্ড, আকাশ-প্রলেপে চাকা, নয়কো কেবল নীরেট গান, নয়কো কেবলি ফাকা। জড়ের বাঁধন বন্ধ আকাশে, আকাশ-বাধন জড়ে পৃথিবী জুড়িয়া সাগর যেমন, আণটি যেমন ধড়ে। ‘ইথার-পাথারে, তড়িতবিকারে, অড়ের জীবন দোলে, বিশ্বমােহের সুপ্তি ভাঙিছে সৃষ্টির কলরােলে।