পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপস্থিত হন। ডাক্তার তাঁহার চিকিৎসা করেন এবং বিদ্যাসাগর নিজ হস্তে মলমূত্র পরিষ্কার করিয়া দেন। তিনি নিজে ঔষধের মূল্য দিয়াছিলেন। কোন অনাথ দুঃস্থ লোক পীড়িত হইলে, তিনি স্বয়ং গিয়া তাহার সেবা-শুশ্রুষা করিতেন এবং তাহাকে বাঁচাইবার জন্য নিজের ব্যয়ে সাধ্যানুসারে ঔষধ-পথ্য যোগাইতেন।

 একবার নারিকেল-ডাঙ্গায় অধ্যাপক জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চাননের ভাগিনেয় ঈশানচন্দ্র ভট্টাচার্য্যের ওলাউঠা হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় রাত্রিকালে তথায় উপস্থিত হইয়া তাহার চিকিৎসা করান। তিনি নিজের বাসা হইতে মাদুর-বিছানা লইয়া গিয়া রোগীর শয্যার ব্যবস্থা করিয়া দেন। রাজকৃষ্ণ বাবু বলেন, “তাঁহাকে প্রায়ই এইরূপ করিতে হইত। তাঁহার সে অকৃত্রিম দয়ার কার্য্য—কি সব আমার স্মরণ আছে? আর কতই বা বলিব মহাশয়, আর কতই বা শুনিবেন? সে সব কথা স্মরণ হইলে সেই দয়াবতারের সেই করুণ মূর্ত্তি হৃদয়ে জাগরূক হয়। তাঁহার কথা ভাবিলে বুক ফাটিয়া যায়! চক্ষের জল রাখিতে পারি না! আহা! তেমন দয়ালু দাতা কি আর এ জগতে দেখিব?”

 একবার বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাসার সম্মুখে কোন এক ব্যক্তির ভৃত্য ওলাউঠা-রোগাক্রান্ত হয়। যাঁহার ভৃত্য, তিনি তাহার হাত ধরিয়া তাহাকে রাস্তায় বাহির করিয়া দেন। আহা! সে অনাথ পীড়িতের এমন কেহই ছিল না যে, তাহার মুখে একটু জল দেয়। দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর সংবাদ পাইয়া তখনই গিয়া পীড়িত ভৃত্যকে বুকে করিয়া তুলিয়া আনিয়া, আপনার শয্যায় শয়ন করাইয়া দেন। তাঁহার অবিরাম যত্ন-শুশ্রুষায় এবং সুহৃদ্‌-চিকিৎসকের চিকিৎসায় রোগী দুই চারি দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করে।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় সুবিধা পাইলেই আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব এবং গুণবান্ কৃতবিদ্য লোকের চাকুরি করিয়া দিতেন। কোন কোন সময়ে তিনি অপরের জন্য ক্ষতিস্বীকার করিতেও কুণ্ঠিত হইতেন না। এই সময় সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের প্রথম শ্রেণীর অধ্যাপকের পদ শূন্য হয়। মার্সেল্ সাহেব বিদ্যাসাগর মহাশয়কে ঐ পদ গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন। ঐ পদের বেতন ৮০৲ আশী টাকা। পঞ্চাশ টাকার বেতনভোগী বিদ্যাসাগর ঐ পদ-গ্রহণে অসম্মত হন। তাহার কারণ এই—

 তিনি পূর্ব্বে তৎকালিক বহু-শাস্ত্রাধ্যাপক তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয়কে যেরূপেই হউক কোন একটি চাকুরি করিয়া দিব বলিয়া প্রতিশ্রুত ছিলেন এবং উপস্থিত পদে তর্কবাচস্পতি মহাশয় উপযুক্ত ব্যক্তি বলিয়া তাঁহার ধারণা ছিল।