পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাতৃভক্তি।
১৫৩

পালন করিতে পারিলাম না। হা ধিক! শত ধিক্।” সকলেই বাড়ী গিয়াছেন; বিদ্যাসাগর মহাশয় শূন্য প্রাণে ও উদাস মনে সারারাত্রি কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাটাইলেন। পর দিন প্রাতঃকালে তিনি প্রতিজ্ঞ করিলেন,—“ছুটী না পাই, কর্ম্ম পরিত্যাগ করিব, অদ্য কিন্তু বাড়ী নিশ্চিতই যাইব।” তিনি মার্সেল্ সাহেবকে গিয়া বলিলেন,—“ছুটী না দেন, কর্ম্ম পরিত্যাগ করিলাম,— মঞ্জুর করুন; চাকুরীর জন্য জননীর অশ্রু-জল সহ্য করিতে পারিব না।” সাহেব স্তম্ভিত হইলেন! ভাবিলেন,—“কি এ অদ্ভুত মাতৃভক্তি!” তিনি আর দ্বিরুক্তি না করিয়া প্রসন্নচিত্তে তখনই ছুটী মঞ্জুর করিলেন। ছুটী পাইয়াই বিদ্যাসাগর মহাশয় বাসায় অসিলেন এবং বেলা তিনটার সময় ভৃত্যকে সঙ্গে লইয়া যাত্রা করিলেন। আষাঢ় মাস —আকাশ ঘনঘটায় আচ্ছন্ন,—মুহুর্মুহুঃ কড় কড় বজ্রধ্বনি, চকিতে বিদ্যুৎ-চমকানি-অবিরাম বাত্যা প্রবাহিনী,—মূষলধারে বৃষ্টি,—পথ ঘাট কদমাক্ত। বিদ্যাসাগর কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ না করিয়া, মাতৃ-উদ্দেশে উৰ্দ্ধশ্বাসে চলিতে লাগিলেন। সন্ধ্যার সময় ভূত্য শ্রীরামের অনুরোধে তাঁহাকে সে রাত্রি, কৃষ্ণরামপুরের এক দোকানে অবস্থিতি করিতে হয়। তখনও ১২।১৩ বার তের ক্রোশ পথ অবশিষ্ট। পরদিন প্রত্যুষে তিনি আবার চলিতে লাগিলেন। শ্রীরাম ক্লান্ত হইয়া পড়িয়ছিল। তাহার বাড়ী নিকটস্থ কোন গ্রামে। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাকে বাড়ী. যাইতে বলিলেন। শ্রীরাম কিন্তু প্রভুর বিপদাশঙ্কায় সঙ্গ ছাড়িল না। সে ধীরে ধীরে প্রভূর পদানুসরণ করিতে লাগিল। কিয়দ্দুর গিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় ক্ষুধার্ত্ত ও ক্লান্ত শ্রীরামকে একটা দোকানে ফলারে বসাইয়া বলিলেন,—“শ্রীরাম এই পয়সা লও,– বাড়ী

২০