পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বিদ্যাসাগর।

অনেকটা দুর্ব্বোধ হইয়া পড়িয়াছে, তংসম্বন্ধে কাহারও দ্বিধা থাকিতে পারে না। বাগবিন্যাসের দীর্ঘতা ও ছত্র-সন্নিবেশের বিশৃঙ্খলতা হেতু এই সব রচনা মনোহারিণী হইতে পারে নাই। কতকটা ইংরেজী প্রণালীর অসুবর্ত্তী হওয়ায়, ইঁহাদের লিপিপদ্ধতি অনেকটা জটিল হইয়া পড়িয়াছে।

 এই তিন জনের মধ্যে রাজ রামমোহন রায়ের ভাষা দুর্বোধ। রাজেন্দ্রলালের ভাষা কতকটা ভাল বটে, কিন্তু ইহা কৃষ্ণ বন্দ্যর অপেক্ষা দুর্বোধ। কৃষ্ণ বন্দ্যর ভাষা কতকটা জটিল বটে; কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রাঞ্জল। কেবল “বাসুদেব চরিতে” নহে, ইহার পরে রচিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনেক গ্রন্থই সংস্কৃত প্রণালীমতে দীর্ঘ সমাসযুক্ত শব্দপ্রয়োগ দেখিতে পাওয়া যায়; কিন্তু সেই শব্দ বা বাক্য এমনই যথাভাবে যথাস্থানে সন্নিবেশিত হইয়াছে যে, তাহা কোনরূপে শ্রুতিকটু হয় নাই; বরং তাহা মধুর মৃদঙ্গ নিনাদবৎ পাঠক ও শ্রোতার কর্ণমূলে এবং হৃদয়ের অন্তঃস্থলে অপূর্ব্ব সুখ-সঞ্চার করিয়া থাকে। লিপিপদ্ধতি একরূপ হইলেও বিষয়ের লঘুতা ও গুরুতা অনুসারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের রচিত পুস্তকাবলীতে ভাষা-প্রয়োগের সারল্য ও গাম্ভীর্য্যের তারতম্য বহুপ্রকারে দেখিতে পাইবে। এ সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরের অদ্ভূত শক্তি! বিদ্যাসাগর মহাশয়ের রচনায় ব্যর্থ বাক্যপ্রয়োগ অতীব বিরল। তিনি যেখানে ষে বাক্যটা প্রয়োগ করিয়াছেন, মনে হয়, তাহা তুলিয়া লইয়া তৎসমসংজ্ঞক অন্ত বাক্য প্রয়োগ করা দুরূহ। এ শক্তির পরিচয় প্রথম হইতেই তাহার “বাসুদেবচরিতে”।

 ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পাঠ্য পুস্তক ব্যতীত, 'বাসুদেব-