পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্য সন্ধান।
১৭৭

হউক, আমি পুর্ব্বে তোমার নিকট অপরাধ করিয়াছি, তন্নিমিত্ত তুমি আমার প্রাণদণ্ড কর।”

 এখানে আর একখানি পুস্তক উল্লেখযোগ্য। এ খানি জন্‌সন্‌কৃত “রসলাসের অনুবাদ। ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে মহারাজ কালীকৃষ্ণ বাহাদুর কর্ত্তৃক অনুবাদিত ও প্রকাশিত হয়। ইহার ভাষা জটিল; পরন্তু ইহা শব্দালঙ্কারপূর্ণ। ভাষা অশুদ্ধ নহে; তবে ব্যাকরণ ও অলঙ্কারের অসামঞ্জস্য এবং অন্বয়ের দোষ আছে। সেই জন্য জটিল। নমুনা এই,—

 “ইমলাক উত্তর করিলেন, সুখ দুঃখের কারণ নানাবিধ এবং অনিশ্চিত আর সদা পরস্পর ক্লান্ত এবং নানাসম্বন্ধে চিত্রবিচিত্র ও অপূর্ব্ব নানাঘটনাধীন হয়। অতএব যিনি আপনাকে অতি নির্ব্বিবাদে নির্দ্ধারিত করেন, তিনি অবশ্য জীবিত থাকিয়া, বিবেচনার ও অনুসন্ধানে পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইবেন।”

 ভাষার যে নমুনা দিলাম, ইহাতে ১৮০০ খৃষ্টাব্দের প্রারম্ভ হইতে ১৮৪০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত বাঙ্গালা গদ্যের যে কয়টা ক্রম হইয়াছে, পাঠক তাহার কতক আভাস পাইলেন। প্রথম ক্রম,— পাদরীদের লেখা। দ্বিতীয় ক্রম—এদেশীয় লেখকদের লিখিত “তোতা ইতিহাস,” লিপিমালা,” “রাজাবলী,” “কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের চরিত্র”, বত্রিশ সিংহাসন” প্রভৃতি; তৃতীয় ক্রম—ফোর্ট উইলিয়ম্ কলেজের পাঠ্য পুস্তক,—“পুরুষ-পরীক্ষা,” “হিতপদেশ” প্রভৃতি। তিনটী ক্রমেই পুষ্টতরতার পরিচয়। এখন পাঠক বুঝুন, “বাসুদেব চরিতের” ভাষা আরও কত পুষ্টতর। ইহার প্রণালী-পথ সম্পূর্ণ নূতন। এমন বিশুদ্ধ ও সুখবোধ ভাষা পূর্ব্বে কোন গ্রন্থেই ছিল কি? বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষার সরলতা ও সুখবোধতার