পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্য সন্ধান।
১৭৯

লিপিভঙ্গী ও বাগ্‌বিন্যাস-চাতুরী যেন “নিতুই নব।” অবিকল অনুবাদ হইয়াছে; কিন্তু ভাবভঙ্গ আদৌ হয় নাই।

 স্বল্পাক্ষরে যিনি বহু ভাব প্রকাশ করিতে পারেন, তিনি শক্তিশালী লেখক বলিয়া পরিচিত। ভাব-পূর্ণ সংঘমিত শব্দ- প্রয়োগে যিনি নিপুণ, তিনি সুলেখক নামে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যে এ প্রতিষ্ঠা আছে, তাহা তাঁহার ভাষান্তরিত ও প্রণীত পুস্তক এবং অন্যান্য ভাষান্তরিত ও সঙ্কলিত পুস্তকাবলীর মুখবন্ধ, প্রস্তাবনা প্রভৃতি পাঠ করিলে সহজে উপলব্ধ হয়।

 অনুবাদে এবং লিপিচাতুর্য্যে অক্ষয়কুমার দত্তেরও কৃতিত্ব কম নহে। ভাষার পরিশুদ্ধি ও সুপদ্ধতি সম্বন্ধে অক্ষয়কুমার বিদ্যাসাগরের সমকক্ষ; তবে বিদ্যাসাগরের ন্যায় অক্ষয়কুমারের ভাষায় বৈচিত্র্য নাই, বিদ্যাসাগরের ভাষা একসুরে বাঁধা, কিন্তু তাহাতে রাগালাপের বৈচিত্র্য বহুল। এ ভাষায় খেয়াল, ধ্রুপদ, টপ্পা, চুট্‌কী সবই আছে। অক্ষয়কুমার দত্তের ভাষা এক সুরে বাঁধা, কিন্তু ইহাতে রাগালাপের বৈচিত্রা নাই। বিদ্যাসাগরের ভাষায় মৃদঙ্গ, তবলা, ঢোল, খোল সকল যন্ত্রের তাল পাইবে; অক্ষয়- কুমারের ভাষায় কেবল মৃদঙ্গের আওয়াজ।

 যাহা হউক, “বাসুদেব-চরিতের” ন্যায় উপাদেয় পাঠ্যও ফোর্টউইলিয়ম্ কলেজের কর্ত্তৃপক্ষ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছিল। খৃষ্টান সাহেবেরা এ পুস্তকের অনুমোদন করেন নাই; তজ্জন্য দুঃখ নাই; দুঃখ এই, একখানি সুপাঠ্য পুস্তকে হিন্দুসন্তানেরা বঞ্চিত হইয়াছেন; দুঃখ এই, বিদ্যাসাগর মহাশয় এইরূপ ভগবানের অবতার- প্রতিপাদক পুস্তক আর লেখেন নাই। চিরকাল কিছু তাঁহাকে সাহেব সিবিলিয়নদের জন্য পাঠ্য লিখিতে হয় নাই। প্রবৃত্তি