পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
বিদ্যাসাগর।

মোহন সেন গুপ্ত বিদ্যারত্ন মহাশয় বলিয়াছেন,—আমরা যখন সংস্কৃত কলেজে পড়িতাম, তখন বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রায়ই সংস্কৃত কলেজে থাকিতেন।[১]কলেজের ছুটী হইলে পর অনেক ছাত্র তাঁহার নিকট উপস্থিত হইত। তিনি সেই সু-প্রসন্ন সহাস্যবদনে সকলকেই যথারীতি সস্নেহ সম্ভাষণ করিয়া নানা প্রসঙ্গে নানাবিধ জ্ঞানগর্ভ ও রহস্যপূর্ণ কথাবার্ত্তা কহিতেন। তাঁহার কাছে যাইলেই ছাত্রেরা প্রায়ই রসগোল্লা, সন্দেশ খাইতে পাইত। তাঁহার প্রীতিসম্ভাষণে কেহই বিমুখ হইত না। বালকদিগের প্রতি বিদ্যাসাগর মহাশয় চিরকালই বান্ধব-ব্যবহার করিতেন, তা কি সংস্কৃত কলেজে আর কি স্বকৃত বিদ্যালয়ে। ছাত্রবর্গকে সর্ব্বদা মধুর আত্মীয়-সম্ভাষণে “তুই” বলিয়া সম্বোধন করাই তাঁহার স্বভাব ছিল। তাঁহার মুখে সেই অমৃতায়ন “তুই” সম্বোধন শুনিয়া, প্রিয় ছাত্রবর্গ আপনাদিগকে তাঁহার আত্মীয় অপেক্ষা আত্মীয় বিবেচনা করিত। সত্য সত্যই সেই “তুই” টুকু যেন স্বর্গীয় স্নেহের ক্ষীরভরা। যেন সেই “তুই” টুকুরই মধ্যে বিশ্বম্ভরা আত্মীয়তা নিহিত ছিল। বালকদিগের প্রতি যেমন তিনি সততই কোমল ব্যবহার করিতেন, আবার আবশ্যক হইলে,


  1. রাজকৃষ্ণ বাবুর মুখে শুনিয়াছি, বিধবা-বিবাহের আন্দোলনকালে তিনি প্রায়ই সংস্কৃত কলেজেই রাত্রি যাপন করিতেন এবং নিজ মত সমর্থনার্থ নানা শাস্ত্রের আলোচনা করিতেন। কলেজের সম্মুখেই শ্যামাচরণ বিশ্বাসের বাটী। রাত্রিকালে কখন কখন তিনি শ্যামাচরণ বাবুর বাটীতে আহার করিতেন; কখনও বা কলেজেই খাইতেন। প্রাতে কিন্তু প্রত্যহ রাজকৃষ্ণ বাবুর বাটীতে আহারের ব্যবস্থা ছিল। শ্যামাচরণ বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অন্যতম অভিন্নহৃদয় সুহৃদ্‌ ছিলেন।