পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৪
বিদ্যাসাগর।

সেই সময় হইতে বিদ্যাসাগর মহাশয় যখনই বর্দ্ধমানে যাইতেন, তখনই মহারাজ তাঁহার সসন্ত্রম আদর-অভ্যর্থনা করিতেন। বর্ধমানাধিপতি, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এমনই শুভাকাঙ্খী ছিলেন যে, বীরসিংহ গ্রামকে তাঁহার তালুক করিয়া দিবার জন্য তিনি স্বয়ং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া প্রস্তাব করিয়াছিলেন।

 এই প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর মহাশয় এই কথা বলিয়াছিলেন,—“আমার যখন এমন অবস্থা হবে যে, আমি সমুদয় প্রজার খাজানা দিতে পারিব, তখন তালুক লইব।”[১]

 এই বর্দ্ধমানরাজ বিধবা-বিবাহ-বিষয়ে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিধবা-বিবাহের আইন জন্য যে আবেদন করিয়াছিল, তাহাতে বর্দ্ধমান-রাজের স্বাক্ষর ছিল।

 যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত বর্দ্ধমান-রাজের এত ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা, তাঁহার অনুরোধে-মাত্রেই যে সারদাপ্রসাদ বর্দ্ধমানরাজবাটীতে কর্ম্ম পাইবেন, তাহা আর বেশী কথা কি? সারদাপ্রসাদের সংসার পরিচালন-সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় নিশ্চিন্ত হইলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বয়ং সোমপ্রকাশে লিখিতেন। সুলেখক মদনমোহন তর্কালঙ্কার মহাশয়ের দুই একটা প্রবন্ধও মধ্যে মধ্যে ইহাতে প্রকাশিত হইত। ক্রমে কিন্তু প্রতি সোমবারে নিয়মিত সোমপ্রকাশ বাহির করা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পক্ষে কিছু ভার-স্বরূপ হইয়া পড়িল। সমায়াভাবপ্রযুক্ত তিনি ইহাতে আর সম্যক্ মনোযোগী হইতে পারিতেন না। এক দিন বিদ্যাসাগর মহাশয় স্পষ্টই বলেন,—“একে তো আমার সময় নাই, তাহার

  1. এই ঘটনার কথা উত্তরপাড়া নিবাসী শ্রীযুক্ত রাজা প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের নিকট শুনিয়াছি।