পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৮
বিদ্যাসাগর।

 সরকারী কর্ম্মে বিদ্যাসাগরের আর কোনও সম্পর্ক ছিল না; তবুও রাজপুরুষগণ তাঁহার কত সম্মান করিতেন, তাহা এইখানে বুঝা যায়। তেজস্বী বিদ্যাসাগর মহাশয়ও বঙ্গেশ্বরকে স্পষ্টাক্ষরে কথা বলিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। বিদ্যাসাগর মহাশয় বুঝিতেন, বিডন্ সাহেব তাঁহার যথেষ্ট সম্মান করিতেন; নহিলে তিনি কি অমন করিয়া বলিতে পারেন,—“আপনার রাজত্বে এ কি অন্যায়!” কোথায় সম্ভ্রমত্রুটীর সম্ভাবনা আর কোথায় নহে, তাহার বিচার করিয়া তিনি ভাল মন্দ কথা কহিতেন; এবং কহিতে জানিতেন।

 ১২৭৩ সালের বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে বা ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের মে ও জুলাই মাসে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ আবির্ভূত হইয়াছিল। সে দুর্ভিক্ষের কথা স্মবণ হইলে শরীর শিহরিয়া উঠে এবং মস্তক ঘুরিয়া পড়ে। কত লোককে শাক, কচু সিদ্ধ করিয়া খাইতে হইয়াছে; কত লোক অনাহারে মরিয়াছে; কত পিতামাতা পুত্রকন্যাকে ফেলিয়া, কত স্বামী স্ত্রীর মুখ না চাহিয়া, কত স্ত্রী স্বামীর অপেক্ষা না করিয়া, দগ্ধ জঠরজ্বালায়

    যাইতে হইয়াছিল। তখন এ পদের বেতন হাজার টাকা ছিল। এই বেতনের উল্লেখ করিয়া, ৺শ্যামাচরণ বিশ্বাস মহাশয়ের স্ত্রী, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ কন্যাকে বলিয়াছিলেন,—এতদিন তোমার বাপের হাজার টাকা মাহিনা হইত।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কন্যা বলেন, “তাহা হইলে স্কুল বাড়ী এ সব হইত কি?” বিদ্যাসাগর মহাশয় কন্যার মুখে এই কথা শুনিয়া বলিয়াছিলেন,—“হইত বৈকি?” আমরা বলি, হইত বৈকি, যদি ইয়ং সাহেবের সহিত মতান্তর না হইত।