পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৪
বিদ্যাসাগর।

না লইয়া থাকিতে পারিতেন না। দুই জনেই দাতা ও দয়ালু। গ্রহ-উপগ্রহের পরম্পর অবিচ্ছিন্ন আকর্ষণের ন্যায় দুই দাতা ও দয়ালু হৃদয়ে আকর্ষণ-সংঘটন হইয়াছিল।

 স্বদেশী হউক, বিদেশী হউক, ব্রাহ্ম হউক, খৃষ্টান্ হউক, হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, সাহসী, সদালাপী, সরল, সত্য-সন্ধ ব্যক্তিমাত্রেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের হৃদয় অধিকার করিতেন। যিনি যে পথেই চলুন, দেশের হিত-কামনা তাঁহার জীবনের চরম লক্ষ্য বুঝিলেই, বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে প্রাণ ভরিয়া প্রেমালিঙ্গন দিতেন। কেশবচন্দ্র সেনের সহিত তাঁহার অনেক বিষয়ে মতবিরোধ ছিল, কিন্তু তিনি কেশবকে দেশের হিতকামী বলিয়া বিশ্বাস করিতেন; এবং তাঁহাকে প্রীতির চক্ষে দেখিতেন। কেশব বাবু তাঁহাকে অন্তরের সহিত শ্রদ্ধাভক্তি করিতেন। বহু-বিষয়ে উভয়ে বিরুদ্ধবাদী হইলেও, সাক্ষাৎ সম্মিলনে উভয়ের অসীম সুখানুভব হইত। কেশব বাবু প্রায়ই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বাটীতে আসিতেন। উভয়ের মধ্যে কেবল দেশের মঙ্গলকাম্য কথারই আলোচনা হইত।

 সরলতা ও সত্যপ্রিয়তাগুণে ব্রাহ্ম রাজেন্দ্রনারায়ণ বসুর সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ঘনিষ্ঠতা হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিও রাজনারায়ণ বাবুর অটল শ্রদ্ধা-ভক্তি ছিল। তিনি মনে করিতেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় ধর্ম্ম প্রচারক হইলে, দেশের মহামঙ্গল সাধিত হইতে পারিত। এক সময়ে তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে একথা খুলিয়া বলিতে কুণ্ঠিত হন নাই। তদুত্তরে বিদ্যাসাগর মহাশয় একটু রহস্য-ভাবে বলিযাছিলেন,—“কাজ নাই মহাশয়, ধর্মপ্রচারক হইয়া। আমি যা আছি এবং