পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
বিদ্যাসাগর ।

গ্রহণে। ক্ষণজন্ম বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করিলেন; ধীরে ধীরে অলক্ষ্যে দরিদ্র ব্রাহ্মণ পিতা ঠাকুরদাসের কুটীরে একটু লক্ষ্মী-শ্রী দেখা দিল। পাড়ায় পাড়ায় রব উঠিল,—“বাড়ুয্যেদের বাড়ীতে পয়মন্ত ছেলে জন্মিয়াছে।” “পয়মন্তের” প্রতিপত্তি বিদ্যাসাগরের বাল্যকাল হইতে। বাল্যকাল হইতে তিনি প্রতিবাসীর প্রীতিপাত্র।

 পিতামহ রামজয় জাত পৌত্রের নাম রাখিয়ছিলেন,— ঈশ্বর। পঞ্চম বৎসরে ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যারম্ভ হয়। তখন বীরসিংহ গ্রামের অবস্থা তাদৃশ উন্নত ছিল না। গ্রাম্য-পাঠশালায় বালকদিগের বিদ্যারম্ভ হইত। পাঠশালার শিক্ষা সাঙ্গ হইলে, উহারই মধ্যে অবস্থাপন্ন ব্রাহ্মণ-সন্তানের টোলে সংস্কৃত শিক্ষার সুত্রপাত করিতেন। টোলে বিদ্যার পর্যাবসান। কেহ কেহু বা জমিদারী সেরেস্তাবিদ্যা শিখিতেন।

 সে সময সনাতন সরকার গ্রামের গুরুমহাশয় ছিলেন। সরকার মহাশয় বড় প্রচারপটু ছিলেন বলিয়া ঠাকুরদাস পুত্রের জন্য অন্য গুরুর অন্বেষণ করেন। কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামক এক কুলীন ব্রাহ্মণ তাঁহার মনোনীত হন। কালীকান্তের নিবাস বীরসিংহ গ্রাম। তিনি কিন্তু ভদ্রেশ্বরের নিকট গোরুটী গ্রামে শ্বশুর বাড়ীতে বাস করিতেন। কালীকান্ত স্বকৃত-ভঙ্গকুলীন। 'কৌলীন্য-কল্যাণে তাঁহার অনেকগুলি বিবাহ হইয়াছিল। ঠাকুরদাস তাঁহাকে আনাইয়া নিজগ্রামে একটী পাঠশালা করিয়া দেন। বালক বিদ্যাসাগর ও গ্রামের অন্যান্য বালকেরা তাঁহার পাঠশালায় পড়িত। তিনি যত্নসহকারে সকলকে শিক্ষা দিতেন। কালীকান্তের সৌজন্যে প্রতিবাসিমণ্ডলী তাঁহার প্রতি বড় অনুরক্ত ছিল।