পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চরিত্র-চর্চ্চা।
৬১৫

কথা কহিতে চাহি না, বিদ্যাসাগরের যখন জন্ম হয়, সে সময় ব্রাক্ষ্মণের ঘরে নিত্য সন্ধ্যা-আহ্নিক করিত না, এমন লোক প্রায় দেখা যাইত না; কিন্তু নিষ্ঠাবান্ ব্রাহ্মণের বংশধর বিদ্যাসাগর, উপনয়নের পর অভ্যাস করিয়াও ব্রাহ্মণের জীবনসর্ব্বস্ব গায়ত্রী পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার ধর্ম্মভাব কোন্ স্রোতে বহিবে, করুণাময় বাল্যকালেই ইঙ্গিতে তাহার আভাস দিয়াছিলেন।

 ইহাই বিদ্যাসাগরের চরিত্রনির্য্যাস। আন্তরিকতা ও একাগ্রতা সে চরিত্রভিত্তির মূল উপকরণ। হিন্দুসন্তান বিদ্যাসাগরের এই আন্তরিকতা ও একাগ্রতা লইয়া, শাস্ত্রনিশ্চিত স্বকার্য্য-সাধন তৎপর হয়, ইহাই কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা। এই প্রার্থনা লইয়াই, “বিদ্যাসাগরে”র প্রকাশ।

 প্রথম বৎসরের নবজীবনে কবিবর হেমচন্দ্র যে সরল ও সরস ভাষায় এবং সম্যক্ উপযোগী গ্রাম্য-উপমায়, বিদ্যাসাগরচরিত্রের স্পষ্ট নির্দেশ করিয়াছেন, তাহা উদ্ধৃত করিয়া, চরিত্র-চর্চ্চার উপসংহার করিলাম। কবি সংক্ষেপে কয়েকটা কথায় লিখিয়াছেন—

“আস্‌চে দেখ সবার আগে বুদ্ধি সুগভীর,
বিদ্যার সাগর খ্যাতি, জ্ঞানের মিহির।
বঙ্গের সাহিত্য-গুরু শিষ্ট সদালাপী,
দীক্ষা-পথে বুদ্ধঠাকুর স্নেহে জ্ঞানবাপী।
উৎসাহে গ্যাসের শিখা, দার্ঢ্যে শালকড়ি,
কাঙ্গাল বিধবা-বক্ষ্ম অনাথের নড়ি।
প্রতিজ্ঞায় পরশুরাম, দাতাকর্ণ দানে,
স্বাতন্ত্র্যে সে কল কাঁটা, পারিজাত ঘ্রাণে।