পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৬
বিদ্যাসাগর।

তরণীকে সাবধানে গন্তব্য স্থানে লইয়া গিয়াছিলেন, তাঁহারই জন্য তরণী চড়ায় বাধে নাই, ঘূর্ণাবর্ত্তে পড়িয়া নিমজ্জিত হয় নাই। বিদ্যাসাগর একটা বেদী নির্ম্মাণ করিয়া তাহার উপর আপনি দেবতা সাজিয়া দাঁড়ান নাই; পড়াইয়া উচ্চকণ্ঠে আপনার যশোঘোষণা করিবার চেষ্টা করেন নাই; অসাধারণ ধৈর্য্য সহকারে নিপুণতার সহিত বঙ্গভাষার মন্দির নির্ম্মাণ করিয়া গিয়াছেন; ভক্তের মত তিনি সে মন্দিরের সোপান হইতে চূড়া পর্যন্ত বিস্তৃত করিয়া আপনি তৃপ্ত হইয়াছেন। তিনি সে মন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন বলিয়াই আজ আমরা অবাধে সে মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে পূজা করিয়া ধন্য হইতে পারিতেছি। বিদ্যাসাগর যে মৌলিক রচনা না করিয়া দেশের লোকের হিতের জন্য মৌলিক উপায়ে বঙ্গভাষা শিক্ষার পথ সুগম করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার মহত্ত্ব ও স্বার্থত্যাগই প্রকাশ পাইয়াছে। যশোলাভের অপেক্ষা স্বার্থত্যাগের গৌরব অনেক অধিক। দধীচির গৌরব তপস্যায় নহে, স্বার্থত্যাগে—আত্মত্যাগে। সেরূপ তপস্যা অনেকের পক্ষে সম্ভব; সেরূপ স্বার্থত্যাগ নিতান্ত দুর্ল্লভ।”

 রবীন্দ্রবাবু বলিয়াছিলেন, “মাঝে মাঝে বিধাতার নিয়মের ব্যতিক্রম হয়,” এবং “বিশ্বকর্ম্মা যেখানে সাত কোটি বাঙ্গালী নির্ম্মাণ করিতেছিলেন, সেখানে দুই এক জন মানুষ গড়িয়া বসেন!” বিদ্যাসাগরের আবির্ভাব সেইরূপ নিয়মের ব্যতিক্রম! রামেন্দ্র বাবুও তাঁহার প্রবন্ধের প্রারম্ভে বলিয়াছিলেন, “এই হতভাগ্য দেশে হতভাগ্য জাতির মধ্যে সহসা বিদ্যাসাগরের মত একটা কাঠের কঙ্কালকিশিষ্ট মনুষ্য ___পে উৎপত্তি হইল,