পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার সঙ্কল্প।
৪৫

 বালক বিদ্যাসাগরের বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় পাইয়া উপস্থিত সকলেই বিস্মিত হইয়াছিলেন। সকলেরই সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ,— ঈশ্বরচন্দ্রকে কোন একটা ভাল স্কুলে ভর্ত্তি করিয়া দেওয়া হয়। পুত্রের প্রশংসাবাদে পিতা ঠাকুরদাস পুলকিত হইয়া বলেন,— “আমি ঈশ্বরচন্দ্রকে হিন্দু স্কুলে পড়াইব।” উপস্থিত সকলেই বলিলেন,—“আপনি দশ টাকা মাত্র বেতন পান, আপনি পাঁচ টাকা বেতন দিয়া কিরূপে হিন্দু স্কুলে পড়াইবেন?”

 ঠাকুরদাস বলিলেন,—“পাঁচ টাকায় যেরূপে হউক, সংসার চালাইব।” ঠাকুরদাসের হৃদয় তখন উচ্চাকাঙখার প্রজ্বলিত অনল-শিখায় উদ্দীপিত। বালকের প্রতিভা-কথা স্মরণ করিয়া, ব্রাহ্মণ আপনার দারিদ্র্য-দুঃখ বিস্মৃত হইয়া গিযাছিলেন। দরিদ্র: ব্রাহ্মণ পূর্ণানন্দে পূর্ণভাবে নিমগ্ন। ঠাকুরদাস পুত্র ঈশ্বরচন্দ্রকে হিন্দু স্কুলে পড়াইবেন বলিয়া স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন; কিন্তু তিন মাস কাল তাহা আর ঘটিয়া উঠে নাই। এই তিন মাস কাল ঈশ্বরচন্দ্র নিকটবর্ত্তী একটী পাঠশালায় যাইতেন। এই পাঠশালার গুরুমহাশয় সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বরচিত চরিতে লিথিয়াছেন—“পাঠশালার শিক্ষক স্বরূপচন্দ্র দাস, বীরসিংহের শিক্ষক কালীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা শিক্ষাদান বিষয়ে বোধ হয় অধিকতর নিপুণ ছিলেন।” দুর্ভাগ্যেরর বিষয়, আজ কাল বাঙ্গালা শিক্ষার এরূপ সুনিপুণ গুরুমহাশয় দুর্লভ। এ দুলর্ভতার হেতু লোকের প্রকৃতি-প্রবৃত্তির পরিবর্তন। এখন পাঠশালাও আছে, গুরুমহাশয়ও আছে; নাই সেই তলম্পর্শিনী শিক্ষা; আর নাই সেই সুদক্ষ শিক্ষক; এখনকার পাঠশালা ইংরেজিরই রূপান্তর; গুরু অন্যরূপ হইবে কিসে?