পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
বিদ্যাসাগর।

পিতার নিকট চালাকাঠের মার খাইয়া কলেজের তদানীন্তন কেরাণী রামধন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ীতে পলায়ন করিয়াছিলেন। রামধন বাবু তাঁহাকে অতি যত্নের সহিত বাড়ীতে রাখিয়া অহারাদি করান। পরে তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়া বাসায় পৌছাইয়া দেন। সময়ে সময়ে পিতার নিকট মার খাইয়া, ঈশ্বরচন্দ্র এমনই আর্ত্তনাদ করিতেন যে, তাহাতে সিংহ-পরিবার উত্যক্ত হইয়া উঠতেন এবং ঠাকুরদাসকে বলিতেন,—“এরূপ প্রহারে হয় তো বালক কোন দিন মারা যাইবে; অতএব যদি এরূপ প্রহার কর, তাহা হইলে এখান হইতে তোমাকে স্থানান্তরে যাইতে হইবে।” ইহাতে প্রহারের মাত্র কিছু কম হইত। ঈশ্বরচন্দ্রও অনেকটা সাবধান হইয়া চলিতেন। পাছে নিদ্রা আসে বলিয়া, তিনি আপনার চক্ষে সরিষা তেল দিতেন। তেলের জ্বালায় নিদ্রা পলায়ন করিত। বর্ত্তমান যশস্বী খ্যাতনাম কোন কোন ব্যক্তি ঘুম ভাঙ্গাইবার জন্য বাল্যকালে এইরূপ ও অন্যরূপ উপায় অবলম্বন করিতেন, ইহাও আমরা জানি। লেখকের কোন বন্ধু বাল্যকালে ঘুমাইবার পূর্ব্বে পায়ে দড়ি বাঁধিয়া রাখিতেন। দড়ির টানে নিদ্রা ভঙ্গ হইলে, তিনি পাঠাভ্যাসে রত হইতেন। ইনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছিলেন এবং এক্ষণে এক জন অধিক বেতন-ভোগী উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারী।

 বুদ্ধিমান ও প্রতিভাশালী বালকদিগের জনয় প্রচণ্ড প্রহার পীড়ন বা কঠোর দণ্ড-শাসনের প্রয়োজন হয় না; বরং এ ব্যবস্থায় অনেক সময় বিপরীত ফল ফলিয়া থাকে যাহারা স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিহীন বা বিদ্যার্জনে অমনোযোগী, তাহাদের তো কিছুতেই 'কিছু হয় না; পরন্তু এমনও দেখিয়াছি, কঠোর শাসন-পীড়নে