পাতা:বিদ্যাসাগর - প্রচার পুস্তিকা (১৯৫০).pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অতঃপর দেশের সামাজিক বিশৃঙ্খলা—বিশেষতঃ নারীজাতির অবস্থা তাঁহাকে বিচলিত করে। তিনি প্রাণপণ চেষ্টায় এ দেশে স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার ও নারীদের নানাবিধ সামাজিক নিগ্রহের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য সংগ্রাম করিতে থাকেন। বাল্য-বিবাহ বন্ধ করিতে, বহু-বিবাহ বর্জ্জন করিতে এবং বালবিধবাদের পুনর্বিবাহের প্রচলন করিতে তাঁহার প্রয়াসের অন্ত ছিল না। পতির অবর্ত্তমানে অনাথা হিন্দু-নারীর সংস্থানের জন্য তিনিই প্রথম জীবন-বীমা প্রণালীতে “হিন্দু ফ্যামিলি এ্যানুইটি ফাণ্ড” স্থাপিত করেন। বর্ণ-পরিচর, বোধাদয়, উপক্রমণিকাদি স্কুলপাঠ্য অসংখ্য পুস্তকাবলী নিজে রচনা করিয়া এবং বেসরকারী কলেজ মেট্রোপলিটান ইনষ্টিটিউশন প্রভৃতি শিক্ষালয় স্থাপন করিয়া তিনি দেশে শিক্ষা বিস্তারের পথ প্রশস্ত করেন। সরকারী সাহায্যে বঞ্চিত হইয়াও তিনি দেশের বহুস্থানে অনেকগুলি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত করেন।

 বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র নবযুগ প্রবর্ত্তিত করিয়াছিলেন। এজন্য তাহাকে ‘বাংলা সাহিত্যের জনক’ বলা হয়। ‘সীতার বনবাস’ ইত্যাদি তাঁহার রচনা বাংলা সাহিত্যের অলঙ্কার।

 দুঃস্থ-দরিদ্রদের জন্য তাঁহার প্রাণ সর্ব্বদাই কাঁদিত। পাঠ্যাবস্থায় যখন নিজের দুই বেলা আহারের সঙ্গতি ছিল না তখনও তিনি নিজ বৃত্তি হইতে দরিদ্র সহপাঠীদের সাহায্য করিতেন, পরেও তাঁহার স্বোপার্জ্জিত সমস্ত অর্থই আর্ত্তের সাহায্যে ব্যয়িত হইত। তাহার এ সাহায্য এত ব্যাপক ও এত আন্তরিক ছিল যে “বিদ্যাসাগর” অপেক্ষা “দয়ার সাগর” নামেই তাঁহার পরিচিতি ছিল সমধিক।

“তুমি আর্ত্তের, তুমি বেদনার, ছিলে সকলের তুমি—
সবারে যেমন আলো দেয় রবি, ফুল দেয় সবে ভূমি!”-নজরুল ইসলাম