পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পারিবারিক জীবন
৪৯

পরিণয়। এই শুভ-পরিণয় প্রথাই পরিবারগঠনের মূল এবং মানবের সংসারবন্ধনের সেতুস্বরূপ।

 কর্ত্তব্যসাধনেই মানুষের মনুষ্যত্ব। হিতাহিত বিচার কর্ত্তব্যজ্ঞানের মূূলেই নিহিত রহিয়াছে। পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হইয়া পরিবারবর্গে পরিবেষ্টিত হইলে, মানুষের দাম্পত্যকর্ত্তব্য এবং অপত্যাদির প্রতি কর্ত্তব্যের উৎপত্তি হইয়া থাকে। প্রতিবেশীর সুখস্বচ্ছন্দতার প্রতি দৃষ্টি রাখাও পৌরজন মাত্রেরই কর্ত্তব্য। মানবজাতিতে জন্ম হেতু, আর আত্মকর্ম্ম ও অবস্থাবশতঃই মানুষকে কতকগুলি কর্তব্যসাধন করিতে বাধ্য হইতে হয়। এইরপে চিন্তা করিলে, মানুষের কর্তব্যের অসীম পরিসর দেখিতে পাওয়া যায়। পিতামাতার প্রতি সন্তানের, সন্তানের প্রতি পিতামাতার, পতির প্রতি পত্নীর, পত্নীর প্রতি পতির, ভ্রাতাভগিনীর প্রতি ভ্রাতাভগিনীর, আত্মীয় কুটুম্বের প্রতি আত্মীয় কুটুম্বের, প্রতিবেশীর প্রতি প্রতিবেশীর, স্বদেশবাসীর প্রতি স্বদেশবাসীর এবং প্রত্যেক মনুষ্যের প্রতি প্রত্যেক মনুষ্যের কর্ত্তব্য রহিয়াছে। এই সকল কর্ত্তব্যের কোন একটি সাধিত না হইলেই, মানুষকে অপরাধী হইতে হয়।

 জ্ঞান ও শক্তি অনুসারে মানুষের কর্তব্যের পরিসর বর্ধিত হইয়া থাকে। মাতাপির প্রতি কর্ত্তব্য বুদ্ধিমান ও পারদর্শী সন্তানের যত অধিক, নির্বোধ বা অল্পবয়স্ক সতানের তত নহে। যিনি যে পরিমাণে বিধাতার প্রদত্ত সম্পদ লাভ করিয়াছেন, তিনি সেই পরিমাণে তাহার সদ্ব্যবহার না করিলে প্রত্যব্যয়গ্রস্ত হইবেন তাহাতে সন্দেহ কি? কর্ত্তব্যসাধনেই প্রকৃত ধার্ম্মিকতা। কর্ত্তব্য যাহার নিকট দুর্ব্বহ নহে, কর্ত্তব্যকার্য্যসম্পাদন, তিক্ত ঔষধ সেবনের ন্যায় যাঁহার নিকট ক্লেশকর নহে, বালকের ব্যায়ামের ন্যায় কর্ত্তব্য যাহার নিকট মঙ্গলকর ও সুখপ্রদ, তিনিই প্রকৃত নিষ্কামধর্ম্মের অধিকারী ও সাধুপদবাচ্য।

 ১২৪৮ সালের অগ্রহায়ণ বা ১৮৪১ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে, ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে বিদ্যাসাগর মহাশয় নিযুক্ত হন। ইহার কয়েক মাস পরে বিদ্যাসাগর মহাশয় পিতাকে কর্ম্ম পরিত্যাগ করিতে পরামর্শ দেন। তিনি বলিলেন, “বাবা, এখন আমি মাসে ৫০ টাকা বেতন পাইতেছি, ইহার দ্বারা স্বচ্ছন্দে সংসার চলিবে। আপনি এ পর্য্যন্ত আমাদের জন্য বিস্তর কষ্ট সহ্য করিয়াছেন এবং অকাতরে পরিশ্রম করিয়াছেন। আপনাকে আর শরীরপাত করিতে দিব না। আপনি দেশে গিয়া অবস্থিতি করুন।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিরতিশয় নির্বন্ধে বাধ্য হইয়া ঠাকুরদাস কর্ম্ম পরিতাগপূর্ব্বক বীরসিংহে গমন করিলেন। বিদ্যাসাগর প্রতি মাসে তাহাকে ২০ টাকা পাঠাইয়া দিতেন এবং আপনার বাসাখরচের নিমিত্ত ৩০ টাকা রাখিতেন।

 ঠাকুরদাস কর্ম্ম হইতে অবসর গ্রহণ করিলে পর মাতা দুর্গাদেবী উপযুক্ত পুত ও পুত্রবধুর উপর সংসারের যাবতীয় ভার অপণ করিয়া প্রশান্তমনে